জানুন কী ভাবে ফাঁদে ফেলে প্রতারকরা। প্রতীকী চিত্র
বাংলায় একের পর এক প্রতারক চক্রের হদিশ মিলছে। কিছু দিন আগেই কলকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাট এলাকা থেকে একটি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার ফের এমনই এক চক্রের হদিশ মিলেছে। আসানসোল থানা এলাকার ঊষাগ্রাম থেকে দীপু দাস নামে বছর তিরিশের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, এই যুবক প্রতারণার প্রশিক্ষণ নেয় এই কাজের বড় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায়।
কলকাতার বেহালা থেকেও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, এই দু’জনকে দীর্ঘদিন ধরেই খুঁজছিল পুলিশ। একাধিক ব্যক্তির থেকে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। বুঝতে পারে এদের পারস্পরিক যোগাযোগের কথা। বিভিন্ন সিমকার্ড ব্যবহার করে ফোন করেই সাধারণ মানুষের থেকে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য হাতিয়ে প্রতারণা করত এরা।
রাজ্যে বেশে কিছুদিন ধরেই পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে কোনও তথ্য না দেওয়া বা মোবাইল ফোনে কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে রাজ্যবাসীকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। সেটা দেখার পরে পুলিশ এটাও জানিয়েছে যে কেউ প্রতারিত হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানান। সেটা না হলে প্রতারণা বন্ধ করা যাবে না। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি অভিযোগের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, এই জালিয়াতরা যে ভাবে কথা বলে, তাতে মূলত তিনটি বিষয় থাকে। এক, কেওয়াইসি আপডেট। দুই, বড় অঙ্কের টাকা পুরস্কার। তিন, ফোনের সিমকার্ড আপডেট। যার একটি শুনলেই গ্রাহকদের বুঝতে হবে তিনি প্রতারণার ফাঁদে পা দিতে চলেছেন। দেশে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতারিতদের বড় অংশ এসবিআই গ্রাহক। তবে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা হাপিস করার জালিয়াতরা সব সময়ে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি সেজে ফোন করে না। অনেক সময়ে বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার নামে ফোন করে। আর সেই ফোন যা যা নির্দেশ দেওয়া হয়, তা মানলে যে ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট থাকুক গ্রাহকদের টাকা হাতানো খুব সোজা হয়ে যায়। ফোনে কথা বলতে বলতে ফাঁদ পাতে প্রতারকরা। ফলে এক ফোনেই লোপাট হতে পারে ব্যাঙ্কে সঞ্চিত সব টাকা। তাই আগেভাগে ভুয়ো ফোন থেকে সতর্ক হওয়া দরকার।
আরও একটি পদ্ধতিতে গ্রাহকের টাকা হাতানো দিন দিন বাড়ছে। এই প্রক্রিয়ায় ওই তিনটি বিষয়ই বলে জালিয়াতরা। কেওয়াইসি আপডেট, পুরস্কারের প্রলোভন এবং ফোনের সিম কার্ড আপডেট করা। গ্রাহকদের খেয়াল রাখতে হবে, কিছু সঠিক তথ্য জানার পরে জালিয়াতরা ফোন করে। সেই সব তথ্য বলে গ্রাহকের কাছে ব্যাঙ্ক বা টেলিকম সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বাস অর্জন করে। এখন বিশ্বাস অর্জনের পরে যে নতুন পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে তা আরও বেশি বিপজ্জনক।
প্রথমে একটি মেসেজ আসছে। যাতে লেখা, ফোনের সিম বা ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড আপডেট করতে হবে। সত্বর যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। সেটা দেখে ওই নম্বরে পাল্টা ফোন করলেই অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কোনও এক শাখার প্রতিনিধি বা টেলিকম সংস্থার কাস্টমার কেয়ার ডেস্কের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনি এখনই অনলাইনে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কিছু টাকার রিচার্জ করুন। এ জন্য একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। জালিয়াত চক্রের প্রতিনিধির কথা মতো সরল বিশ্বাসে সব নির্দেশ পালন করলেই কাজ শেষ।
জালিয়াত চক্রের প্রতিনিধিরা গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘কেওয়াইসি কিউএস অ্যাপ’ টাইপ করে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে। এর পরে ফোনে রিচার্জ করার নির্দেশ দেয়। ‘কেওয়াইসি কিউএস অ্যাপ’ টাইপ করলে আদতে ‘টিম ভিউয়ার কুইক সাপোর্ট’ নামে একটি অ্যাপ খোলে। এই অ্যাপ কোনও ফোনে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এর ফলে কোনও লেনদেন করলে তাতে ব্যবহার করা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর থেকে পাসওয়ার্ড বা ওটিপি সবই অন্য ফোন থেকে দেখতে পাওয়া যায়। সেই পদ্ধতিতেই জালিয়াতরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা লোপাট করতে থাকে। এক একবারে ২৫ হাজার টাকা করে একের পর এক লেনদেনে টাকা তুলতে থাকে। গ্রাহক এসএমএস মারফৎ জানতে পারেন টাকা তোলার কথা। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। ব্যাঙ্ক অভিযোগ জানানোর আগেই বেশির ভাগ সময় অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যায়।