হিসেবের জালে আটকে করের অঙ্ক 

২০১৬-১৭ সালের বাজেট বক্তৃতাতেই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন, সব ছাড় ও কর সংক্রান্ত সুবিধাকে হিসেবে ধরলে, কার্যক্ষেত্রে তখন গড়ে ২৪.৬৭% কর্পোরেট কর দিত দেশীয় সংস্থাগুলি। 

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী 

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত শুক্রবারই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। যাকে ‘ঐতিহাসিক’ তকমা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে খাতায়-কলমে হিসেব কষতে বসে অর্থনীতিবিদদের জিজ্ঞাসা, সত্যিই কি করের হার ততটাই কমবে, যতটা দাবি করছে কেন্দ্র? সংস্থাগুলিই বা নতুন নিয়মের সুযোগ নিতে আগ্রহ দেখাবে কতখানি?

Advertisement

যে কর-ঘোষণাকে ঘিরে শিল্প মহল উচ্ছ্বসিত, তাতে এমন ধোঁয়াশা কেন? কারণ, যখন থেকে কর্পোরেট কর ৩০% থেকে ধাপে ধাপে কমিয়ে ২৫% করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তখন থেকেই তার সঙ্গে জোড়া রয়েছে শর্ত। তা হল, এই কম হারে কর গোনার সুবিধা নিলে, অন্য করছাড় বা সুবিধা নিতে পারবে না সংস্থাগুলি। সুতরাং, ওই সব ছাড় না-নিয়েও যদি নতুন কার্যকরী কর (২৫.১৭%) আগের তুলনায় কম হয়, একমাত্র তবেই এতে নাম লেখাতে আগ্রহী হবে তারা।

অথচ ২০১৬-১৭ সালের বাজেট বক্তৃতাতেই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন, সব ছাড় ও কর সংক্রান্ত সুবিধাকে হিসেবে ধরলে, কার্যক্ষেত্রে তখন গড়ে ২৪.৬৭% কর্পোরেট কর দিত দেশীয় সংস্থাগুলি।

Advertisement

নতুন হিসেব

• এত দিন বড় সংস্থার (ব্যবসা বছরে ৪০০ কোটি টাকার বেশি) কর্পোরেট কর ছিল ৩০%। সারচার্জ ও সেস মিলিয়ে ৩৪.৯৪%।
• এখন কর ২২ শতাংশে নামায় কার্যক্ষেত্রে দিতে হবে ২৫.১৭%।

প্রশ্ন যেখানে

• করছাড় ও ওই সংক্রান্ত সুবিধা ধরে আগে যে ‘নিট’ কর দেশীয় সংস্থাকে দিতে হত (বিশেষত বড় সংস্থাকে), নতুন কার্যকরী করের হার আদৌ তার থেকে কম হবে কি?
• অন্য সব সুবিধা ছেড়ে সংস্থাগুলি সত্যিই কম হারের এই সুযোগ নিতে নাম লেখালে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসার কথা। কিন্তু কার্যকরী হার কম না-হলে, সত্যিই কি সে ভাবে আগ্রহী হবে তারা?

মাঝের কয়েক বছরে কর ছাড় ও সেই সংক্রান্ত সুবিধার হিসেব পাল্টেছে ঠিকই, কিন্তু তবু প্রশ্ন উঠছে, এখনকার হিসেবেও নতুন কার্যকরী হার ছাড়, সুবিধা সমেত হারের তুলনায় কম হবে তো? বিশেষত বড় শিল্পের ক্ষেত্রে? এ বারের ঘোষণায় মূলত যাদের সামনে এই প্রথম এত কম হারে কর গোনার সুযোগের দরজা খুলে দিল কেন্দ্র।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতির অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘দেখা জরুরি, কার্যকরী কর সত্যিই কতটা কমছে। যদি সব সুবিধা বাদ দিয়েও তা আগের থেকে কম হয়, তবে এই নতুন নিয়মে নাম লেখাতে আগ্রহী হবে সংস্থাগুলি। তখন কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসবে। কিন্তু যদি দেখা যায় তা বাড়ছে, তখন কিন্তু এই নিয়মে তেমন আগ্রহী হবে না শিল্প।’’

চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সদস্য এম গোবিন্দ রাওয়েরও টুইট, ‘‘অন্য ছাড় না-নিলে কর কমানোর এই সিদ্ধান্ত চতুর পদক্ষেপ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement