Coronavirus in India

লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হোটেল, পর্যটন-সহ পরিষেবা ক্ষেত্র, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রের সংগঠন সেন্টার ফর এভিয়েশন এর হিসেবে সারা বিশ্বে ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে শুধুমাত্র বিমান পরিবহণেই। পর্যটন ও হসপিটালিটি ক্ষেত্রে আয় কমতে পারে ৫ লক্ষ কোটি, মনে করছে কেয়ার রেটিংস লিমিটেড।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ১৮:০৭
Share:

লকডাউনে বন্ধ রাজধানী দিল্লির হোটেলগুলি। ছবি: পিটিআই

লকডাউনের জেরে শিল্পক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিস্থিতি। বিরাট বিপর্যয়ের মুখে অধিকাংশ ক্ষেত্র। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, তার মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিষেবা ক্ষেত্র। কল সেন্টার থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, বিমান পরিবহণ থেকে হোটেল-রেস্তরাঁ কিংবা পর্যটন— সব পরিষেবা ক্ষেত্রই ভয়ানক আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। সারা বিশ্বের মধ্যেও আবার ভারতেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এপ্রিল মাসের পরিষেবা ক্ষেত্রের সূচক বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই নীচে ছিল বলে মনে করছেন অক্সফোর্ড ইকনমিক্সের বিশেষজ্ঞ প্রিয়ঙ্কা কিশোর।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শৃঙ্খল ছিন্ন করতে প্রথম যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটা ছিল আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করা। ফলে বিমান পরিবহণ ও পরিষেবা ক্ষেত্র বিপুল ধাক্কা খায়। তার পর অন্তত চার দফায় লকডাউন হয়েছে দেশে। তার জেরে অধিকাংশ পরিষেবা ক্ষেত্র ধুঁকতে ধুঁকতে কার্যত ডুবতে বসেছে। বহু সংস্থা দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রের সংগঠন সেন্টার ফর এভিয়েশন এর হিসেবে সারা বিশ্বে ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে শুধুমাত্র বিমান পরিবহণেই। আর্থিক সমীক্ষাকারী সংস্থা ক্রিসিল-এর মতে, লকডাউন ওঠার পর প্রথম দেড় মাস ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কাজকর্ম চলতে পারে হোটেল-রেস্তরাঁ ক্ষেত্রে। তার জেরে এই ক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরে ৫০ শতাংশ আয় কমতে পারে। আবার পর্যটন ও হসপিটালিটি ক্ষেত্রে আয় কমতে পারে ৫ লক্ষ কোটি, মনে করছে কেয়ার রেটিংস লিমিটেড।

ভারতে মোট জিডিপির প্রায় ৫৫ শতাংশই আসে পরিষেবা ক্ষেত্র থেকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রই সবচেয়ে বেশি সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। এপ্রিল মাসে ভারতের পরিষেবা ক্ষেত্রের সূচক ছিল ৫.৪। প্রিয়ঙ্কা কিশোরের মতে, এই হার সারা বিশ্বের পরিষেবা ক্ষেত্রের সূচকের তুলনায় ‘আশ্চর্যজনক ভাবে নিম্নমুখী’। তিনি বলেন, ‘‘উৎপাদন শিল্প-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যখন চাহিদা তলানিতে ছিল (করোনাভাইরাসের প্রকোপের আগে), তখনও পরিষেবা ক্ষেত্রে খারাপ অবস্থা ছিল না।’’ কিন্তু বর্তমানে এই ক্ষেত্রের আঘাত সবচেয়ে বেশি, মনে করেন প্রিয়ঙ্কা।

Advertisement

আরও পডু়ন: লকডাউন আরও বাড়বে? ঘোষণা হতে পারে কাল, বৈঠক সারলেন মোদী-অমিত

কিন্তু বিমান পরিবহণ, হোটেল-রেস্তরাঁ, বিনোদন, পর্যটন ক্ষেত্র পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়েছে। লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই হোটেল-রেস্তরাঁ, শপিং মল-মাল্টিপ্লেক্স বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। ফলে আয় কার্যত শূন্য। আবার লকডাউন উঠে এগুলি চালু হলেও এই ক্ষেত্র সহজে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, মানুষের হাতে অতিরিক্ত টাকা থাকলে তবেই পর্যটন, বিনোদনের জন্য খরচ করেন। আরও অন্তত কয়েক মাস সেই পরিস্থিতি আসবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রিয়ঙ্কা কিশোরের মতে, সামাজিক যোগাযোগ বা জমায়েতের উপর যে সব ক্ষেত্র নির্ভরশীল, সেই সব সংস্থার সঙ্কট সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেবে।

লেমন ট্রি হোটেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পতঞ্জলি গোবিন্দ কেশওয়ানির মতে, পর্যটন শিল্প ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ‘‘দেশের ৬০ শতাংশ নামী হোটেল বন্ধ। বাকি ৪০ শতাংশ হোটেলে সামান্য যা চলছে, তাতে আয় হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: এমসে ৪৮ ঘণ্টায় ৫০ জন স্বাস্থ‍্যকর্মী আক্রান্ত, অপ্রতুল সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র মূলত নির্ভরশীল বিদেশের গ্রাহকদের উপর। বহু দেশের বড় বড় ব্যাঙ্ক ও শিল্পসংস্থাকে পরিষেবা দেয় ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। কিন্তু করোনাভাইরাসের থাবায় গোটা বিশ্বেই মন্দা চলছে। তার জেরে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস, ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো সংস্থাগুলি সংকটের মুখে পড়েছে। অধিকাংশ সংস্থার ত্রৈমাসিক আয় কমেছে বিপুল হারে। নতুন কাজ বা ‘প্রজেক্ট’ নামমাত্র মিললেও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা থাকায় চালু কাজগুলি করতে খুব সমস্যা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement