প্রতীকী ছবি।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ চাইছেন না ব্যাঙ্কের শাখায় একসঙ্গে বেশি গ্রাহক আসুন। সেই মর্মে ইতিমধ্যেই গ্রাহকদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আগামী সপ্তাহে সেটাই হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর সেই কারণে ভিড় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কেন্দ্রের নির্দেশ দাবি করল ব্যাঙ্ক শিল্পের সংগঠনগুলি। তাদের দাবি, গ্রাহকদের কাছে শুধু আর্জি জানিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট নির্দেশ জারি করা জরুরি। আয়তন বুঝে কোন শাখায় কত গ্রাহক একসঙ্গে প্রবেশ করতে পারবেন, তা ঠিক করুন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অন্যথা করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে, যাতে ঝুঁকি বাড়বে গ্রাহক এবং ব্যাঙ্ক কর্মীদের।
কিছু ব্যাঙ্কে ইতিমধ্যে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আগামী সপ্তাহেই নতুন মাসের শুরুতে পেনশন তোলার জন্য ব্যাঙ্কের শাখায় প্রবীণদের ভিড় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্র মহিলাদের জনধন অ্যাকাউন্টে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ওই টাকা তোলার জন্য বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল এবং আধা শহরাঞ্চলের শাখাগুলিতে বেশি গ্রাহক একসঙ্গে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ১০০ দিনের কাজ, বৃদ্ধ ভাতা-সহ আরও কিছু প্রকল্পের টাকা তুলতেও ব্যাঙ্কের শাখায় আসবেন গ্রাহকেরা। চাপ বাড়বে শিক্ষক ও বহু সংস্থার কর্মীদের বেতন তোলারও। সেই অবস্থায় প্রবেশ কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র গ্রাহক সমাগম নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশ না-দিলে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর এবং অফিসারদের সংগঠন আইবকের যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় দাসের। সেই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার জন্য ব্যাঙ্ককর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে নজর দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “অভিজ্ঞতা বলে, ব্যাঙ্ক ডেবিট কার্ড দেওয়া সত্ত্বেও গ্রাহকদের একটা বড় অংশ ব্যাঙ্কে এসে টাকা তুলতেই বেশি পছন্দ করেন। বিশেষ করে আধা শহর এবং গ্রামাঞ্চলে।’’
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) অবশ্য গ্রাহকদের আর্জি জানিয়েছে, তাঁরা যেন খুব প্রয়োজন না-হলে ব্যাঙ্কে না-আসেন। বরং লেনদেন করুন ডিজিটাল মাধ্যমে। নোটের বদলে বেশি ব্যবহার করুন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড। আর ব্যাঙ্কে এলেও যেন গ্রাহকেরা কাউন্টারের কর্মীদের থেকে এবং নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখেন। বলা হয়েছে, লাইনে এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যেও অন্তত ১-১.৫ মিটার দূরত্ব রাখার কথা। কোনও শাখায় একসঙ্গে ৫ থেকে ৬ জনের বেশি গ্রাহক যাতে না প্রবেশ করেন, তা নিশ্চিত করতেও আর্জি জানিয়েছে তারা। শাখায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে শিশু, প্রবীণ এবং সর্দি-কাশিতে ভুগছেন, এমন গ্রাহকদের।
গ্রাহকের কাছে আবেদন
• জোর দিন নেট, ফোন ব্যাঙ্কিং ও কার্ড লেনদেনে।
• ব্যাঙ্কে এলে কর্মীদের থেকে যথাযথ দূরত্ব রাখুন।
• কাউন্টার বা কমন এলাকার কোথাও স্পর্শ করবেন না।
• শাখায় এলে গ্লাভস, স্যানিটাইজ়র এবং মাস্ক ব্যবহার করুন।
• ভিড় এড়িয়ে অন্যের সঙ্গে ১-১.৫ মিটার দূরত্ব রাখুন।
• একসঙ্গে পাঁচ-ছ’জনের বেশি শাখায় প্রবেশ নয়।
• প্রবীণ, শিশু এবং সর্দি-কাশি থাকলে ব্যাঙ্কে না-এলেই ভাল।
ইউনিয়নের দাবি
• মাস পয়লায় পেনশন, জনধন, মনরেগার টাকা তুলতে গ্রাহকদের ভিড় বাড়বে ব্যাঙ্কে।
• অনেকেই প্রবীণ, যাঁদের মধ্যে সংক্রমণের শঙ্কা বেশি।
• ব্যাঙ্কের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় হতে পারে।
• শুধু গ্রাহকদের আর্জি জানানোই নয়। একসঙ্গে অনেকের ভিড় এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার স্পষ্ট নির্দেশ দিন কর্তৃপক্ষ।
• ব্যাঙ্কের কর্মীদের জন্যও বিমার ব্যবস্থা জরুরি।
কিন্তু ইউনিয়ন নেতাদের বক্তব্য, গ্রাহকদের কাছে আইবিএ-র এই আর্জিই যথেষ্ট নয়। ব্যাঙ্ককর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শাখায় গ্রাহক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কেন্দ্রের নির্দেশ জরুরি। আর তা কার্যকর করার জন্য প্রতিটি শাখায় নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করতে হবে। সংগঠনের নেতারা বলেন, “করোনা থেকে বাঁচতে যখন দেশ জুড়ে সব অফিস বন্ধ, তখন ব্যাঙ্ককর্মীরা পরিষেবা দিচ্ছেন। তাই আমাদের দাবি, স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো ব্যাঙ্কের কর্মীদের জন্যও বিমার ব্যবস্থা করুক সরকার।’’
গত শুক্রবার সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মোট ১,০৫,৯৮৮টি শাখা চালু ছিল বলে জানিয়েছে আইবিএ। শনি ও রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ। সোমবার থেকে ফের চালু হবে পরিষেবা। এই পরিস্থিতিতে সংগঠনগুলির অভিযোগ, কর্মীদের স্যানিটাইজার বা মাস্ক কেনার জন্য কিছু ব্যাঙ্ক টাকা দিয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা দেওয়া হয়নি। তার উপরে এখন সাধারণ যানবাহন বন্ধ। তাই ব্যাঙ্ক কর্মীরা যাতে যাতায়াত করতে পারেন, তার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছে তারা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)