Coronavirus

চ্যালেঞ্জ যুঝতে দাওয়াই নির্মলা সীতারামনের

দেশে ‘লকডাউন’ জারি হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে অসুবিধা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০৫:৫৪
Share:

নির্মলা সীতারামন

দেশে আর্থিক জরুরি অবস্থা জারির দিকে এগোচ্ছে না মোদী সরকার। এ কথা জানিয়ে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, করোনার ধাক্কায় আর্থিক জরুরি অবস্থা জারির পরিস্থিতি তৈরিই হয়নি। ফলে আতঙ্কের ভিত্তি নেই। করোনার কারণে আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে বা অর্থবর্ষের সময় বাড়ানো হতে পারে বলে কয়েকদিন ধরেই জল্পনা চলছিল।

Advertisement

দেশে ‘লকডাউন’ জারি হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে অসুবিধা তৈরি হয়েছে। সে দিকে তাকিয়ে এ দিন আয়কর, আর্থিক পরিষেবা, জিএসটি, আমদানি-সহ নানা ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সুরাহা ঘোষণা করেছেন নির্মলা। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলায় আর্থিক ত্রাণ ঘোষণা করেননি। যদিও আশ্বাস দিয়েছে, শীঘ্রই আসবে তা। কাজ চলছে। এ দিন টাস্ক ফোর্স নিয়ে অবশ্য বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন নির্মলা।

১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স তৈরির কথা বলেন। যারা আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রণকৌশল তৈরি করবে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘মোদীর ঘোষণার চার দিন পরেও প্রতিশ্রুতি মতো টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়নি! অর্থমন্ত্রী কেন ফোন তুলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন না? নাকি এই সরকারে তার উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে?’’

Advertisement

আজ নির্মলার জবাব, মোদী নিজে অবস্থার নজর রাখছেন। টাস্ক ফোর্সের বহু স্তর রয়েছে। শিল্পপতিদের নিয়ে উপগোষ্ঠী হয়েছে। সাংসদ, শিক্ষাবিদ, সকলের আলাদা গোষ্ঠী হয়েছে। এরা সংশ্লিষ্ট মহল থেকে তথ্য নিয়ে অর্থ মন্ত্রককে জানাচ্ছে। সংবিধানের ৩৬০ অনুচ্ছেদে আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করে রাজ্যগুলিকে যে কোনও নির্দেশ দিতে পারে কেন্দ্র। সরকারি কর্মীদের বেতনও কমাতে পারে। নির্মলা অবশ্য এই জল্পনা উড়িয়েছেন।

আজকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্প। সিআইআইয়ের ডিজি চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ঠিক সময়ে কর জমা সংক্রান্ত সময়সীমা শিথিল হয়েছে। রাজ্যে ক্রেডাইয়ের সভাপতি সুশীল মোহতার দাবি, আমজনতা থেকে শিল্প, সকলের সুবিধা হবে। তবে দিনমজুরদের জন্যও সুরাহা দরকার। ইন্ডিয়ান চেম্বারের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিংহের যুক্তি, সরকার লকডাউন পর্বে বেশ কিছু পণ্য-পরিষেবাকে সুরাহা দিয়েছে। তবে এগুলির সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্রেও ছাড় জরুরি। যেমন, দুধ, ভোজ্যতেল, ওষুধ, সাবান, টুথপেস্ট জরুরি পণ্যের তালিকায় থাকলে তার কাঁচামাল তৈরির সংস্থাকেও জরুরি পণ্য ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা উচিত।

আয়করে সুবিধা • ২০১৮-১৯ সালের আয়কর রিটার্ন জমা ৩০ জুন পর্যন্ত। • ৩০ জুন পর্যন্ত সংযুক্ত করা যাবে আধার-প্যান। • বিবাদ সে বিশ্বাস প্রকল্পে ৩০ জুনের মধ্যে টাকা দিলে ১০% বাড়তি লাগবে না। • প্রত্যক্ষ করের সঙ্গে যুক্ত নানা আইনে নোটিস, বিজ্ঞপ্তি, রিটার্ন, রিপোর্ট জমার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সময় ৩০ জুন পর্যন্ত। • করদাতার ক্ষেত্রে ওই সব আইনে লগ্নি বা মূলধনী লাভকরের সুবিধা নেওয়া যাবে ওই সময় পর্যন্ত। • আগাম কর, নিজে হিসেব করা কর, সাধারণ কর, উৎসে কর, টিসিএস, ইকুইলাইজ়েশন অব লেভি, এসটিটি, সিটিটির ক্ষেত্রে ৩০ জুনের মধ্যে কর জমা দিলে (দেরির জন্য) বার্ষিক সুদ কমে ৯%। মকুব জরিমানা ও লেট ফি। আর্থিক পরিষেবা • তিন মাসের জন্য অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে ডেবিট কার্ডে টাকা তোলার ক্ষেত্রে লাগবে না ফি। • ওই সময়ের জন্য থাকবে না ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম জমার শর্ত। • বাণিজ্যিক ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য কমছে চার্জ। জিএসটি বা পরোক্ষ কর • ৫ কোটি টাকার কম ব্যবসায় মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের জিএসটিআর-৩বি ফর্ম জুনের মধ্যে জমা দিলে চলবে। চাপবে না সুদ, জরিমানা বা লেট ফি। • বাকিদের ক্ষেত্রে ১৫ দিন দেরি হলে ৯% (এখন ১৮%) সুদ দিতে হবে। তবে নেই জরিমানা ও লেট ফি। • কম্পোজিশন স্কিমের আওতায় আসার সময়সীমা জুনের শেষ সপ্তাহ। ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকের টাকা জমা ও ২০১৯-২০ সালের রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে সময়সীমা একই। • ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিক জিএসটি রিটার্ন জমার সময় বেড়ে জুনের শেষ সপ্তাহ। • নোটিস, বিজ্ঞপ্তি, আবেদন জমা, রিটার্ন জমা, আবেদন, রিপোর্ট-সহ নানা নথি জমা দেওয়া যাবে ৩০ জুন পর্যন্ত। • সবকা বিকাশ প্রকল্পে টাকা জমা দেওয়া যাবে ৩০ জুন পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে দিলে লাগবে না সুদ। কর্পোরেট বিষয়ক • এমসিএ-২১ রেজিস্ট্রিতে কাগজ, রিটার্ন বা স্টেটমেন্ট জমার ক্ষেত্রে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি লাগবে না। • ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংস্থার পর্ষদের দু’টি বৈঠকের মধ্যে ব্যবধান আরও ৬০ দিন বাড়ানো হয়েছে। • পরের অর্থবর্ষ (২০২০-২১) থেকে কোম্পানিজ় (অডিটর্স রিপোর্ট) অর্ডার, ২০২০ কার্যকর হবে। • স্বাধীন ডিরেক্টরেরা নিজেদের মধ্যে ২০১৯-২০ সালের জন্য একটিও বৈঠক করতে না-পারলে, তা আইন ভাঙা হিসেবে দেখা হবে না। • পরের অর্থবর্ষের জন্য অন্তত ২০% আমানত তহবিল তৈরির সময়সীমা বেড়ে হচ্ছে ৩০ জুন। • নতুন নথিভুক্ত সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে ব্যবসা চালুর কথা জানাতে বাড়তি ছ’মাস সময় দেওয়া হয়েছে। • সংস্থার অন্তত এক জন ডিরেক্টরকে ১৮২ দিন ভারতে থাকতে হয়। না-পারলে তা আইন ভাঙা হিসেবে দেখা হবে না। • ১ কোটি টাকা বকেয়ার ক্ষেত্রেই দেউলিয়া আইন প্রয়োগ করা হবে। এখন তা ১ লক্ষ। এতে উপকৃত হবে ছোট শিল্প। বর্তমান অবস্থা ৩০ এপ্রিলের পরেও চললে পাওনাদার বা অন্য সংস্থার আর্জির ভিত্তিতে দেউলিয়া ঘোষণার আর্জির নিয়ম ছ’মাসের জন্য শিথিলের কথা ভাবা হতে পারে। আমদানি • ৩০ জুন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাই ছাড়পত্র দেওয়া হবে। • কাস্টমস ও অন্যান্য আইনের আওতায় নোটিস, বিজ্ঞপ্তি, ছাড়পত্রের নির্দেশ, আপিল জমা, আর্জি জানানো, রিপোর্ট তৈরির মতো নানা ক্ষেত্রে সময়সীমা বেড়ে হচ্ছে ৩০ জুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement