ছবি এপি।
কাহিল চাহিদায় শ্লথ অর্থনীতি দেশের ঘুম কেড়েছে আগেই। সেই ক্ষত গভীর হওয়ায় যখন দিশাহারা সকলে, ঠিক তখনই তাতে দাঁত বসিয়েছে করোনাভাইরাস। সারা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও। এতটাই যে, একের পর এক আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা, উপদেষ্টা সংস্থা, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক ইঙ্গিত দিয়ে চলেছে, পরের অর্থবর্ষে (২০২০-২১)
ভারতের বৃদ্ধি যা হবে বলে ভেবেছিল তারা, তার থেকে কমবে। মুডি’জ়, ক্রিসিল, ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার পরে শুক্রবার ফিচ সেই যুক্তিতেই পূর্বাভাস কমিয়ে করেছে ৫.১%। ঠিক এই ভাবে কাহিল চাহিদা ও অর্থনীতির ঝিমুনির কারণে চলতি অর্থবর্ষেও (২০১৯-২০) বৃদ্ধির পূর্বাভাসে বারবার কাঁচি চালিয়েছে এই সব সংস্থা। তবে তখন অনেকে আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধিতে কিছুটা গতি আসার ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও এ বার জল ঢালল করোনা। এ দিন বিশ্ব অর্থনীতির পূর্বাভাস শূন্যে নামিয়ে ব্যাঙ্ক অব আমেরিকার দাবি, করোনার ধাক্কা আর্থিক মন্দা ঘনিয়েছে। এই নিয়ে টানা তিন দিন ওই হার ছাঁটল তারা।
পরিস্থিতি আঁচ করে বণিকসভা সিআইআই আর্থিক ত্রাণের দাবি জানিয়ে শুক্রবার চিঠি লিখেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাদের প্রস্তাব, অর্থনীতিকে সঙ্কট থেকে বাঁচাতে অবিলম্বে ২ লক্ষ কোটি টাকা ত্রাণ প্রকল্প আনার কথা বিবেচনা করুক কেন্দ্র। ত্রাণের টাকা প্রধানত বিপর্যস্ত নাগরিকদের হাতে সরাসরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। এর আগে অন্য দুই বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার এবং অ্যাসোচ্যামও কেন্দ্র ও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। সওয়াল করেছে অনাদায়ি ঋণ সংক্রান্ত নিয়ম শিথিলের। শিল্প মহলের আর্জি, করোনার ধাক্কা যে সব ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি লেগেছে সেগুলির সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের আর্থিক সাহায্য দিক সরকার। যেমন, নির্মাণ, বিমান, হোটেল, পর্যটন ইত্যাদি।
দীর্ঘ এক বছরের উপর অর্থনীতির ঝিমুনি ভারতে কল-কারখানার উৎপাদন কেড়েছে। পণ্যের চাহিদার অভাবে ব্যবসা মার খাওয়ায় বেড়েছে বেকারত্ব। এ বার করোনা কামড় বসাল হোটেল, রেস্তরাঁ, পর্যটনের মতো পরিষেবায়। মার খেয়েছে পণ্যের খুচরো বিক্রিও। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থা হতে চলেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের। জোগানের সুতোটাই কার্যত ছিঁড়ে গিয়েছে।’’
এ দিন উপদেষ্টা সংস্থা ক্রিসিলও বলেছে, ভারতের বাজারে নগদের জোগান অবিলম্বে না-বাড়লে পস্তাতে হবে। কেন্দ্র অবশ্য সেই ইঙ্গিত দিয়েছে এ দিন। তবে শিল্প চাইছে অবস্থা সামলাতে সুদ কমাক রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। আর ফিচের দাবি, চিনের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। উৎপাদনে ভারত এগোবে কী করে? পড়শির কাঁচামাল ছাড়া যে উপায় নেই! বিশেষত বিদ্যুতিন পণ্য ও যন্ত্রপাতিতে। ফলে লগ্নি মার খাবেই।