প্রতীকী চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা প্রায়ই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে দেনা করে খয়রাতি করার অভিযোগ তোলেন। এ বার কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধেও দেশের মানুষের মাথায় ঋণের বোঝা চাপানোর অভিযোগ উঠল। কংগ্রেসের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাতের ধারের অঙ্ক বাড়ছে। একই ভাবে কেন্দ্রেতাঁর ন’বছরের জমানায় দেশের দেনার বোঝাও তিন গুণ করে ফেলেছে। ফলে প্রত্যেক ভারতীয়ের মাথায় এখন১.২০ লক্ষ টাকার বোঝা চেপে রয়েছে।
গত অক্টোবরে আইএমএফের পূর্বাভাস ছিল, ২০২২-এর শেষে ভারতের মোট ঋণ জিডিপি-র ৮৪% ছোঁবে। কেন্দ্রের তথ্যকে হাতিয়ার করে আজ কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০১৪-য় মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় দেশের ঋণের বোঝা ছিল ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। নয় বছর পরে তা এখন ১৫৫ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। দলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের প্রধান সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী দেশের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আগের ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী ৬৭ বছরে ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। মোদী একাই ১০০ লক্ষ কোটি টাকা দেনা করেছেন। যার অর্থ, মোদী সরকার প্রতি সেকেন্ডে ৪ লক্ষ ঋণ করেছে। দিনে ধার নিয়েছে ৩৪৫৬ কোটি। ফলে প্রতিটি নাগরিকের মাথায় এখন ১.২০ লক্ষ টাকার দেনা রয়েছে।’’
গত ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পেশ করা এই অর্থবর্ষের বাজেটের নথিতেই দেখা গিয়েছিল, রাজস্ব খাতে ১০০ টাকা খরচ হলে, তার মধ্যে ৪০ টাকা পুরনো ঋণে সুদ মেটাতে যাচ্ছে। এ বছর পরিকাঠামো খাতে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়েছেন নির্মলা। কিন্তু সুদ মেটাতেও তাঁকে ১০ লক্ষ কোটির বেশি খরচ করতে হচ্ছে। রাজকোষের হাল নিয়ে শ্বেতপত্রের দাবি জানিয়ে শ্রীনতে বলেন, ‘‘প্রশ্ন হল, সরকারের এই ঋণের বোঝা টানার ক্ষমতা রয়েছে কি না। সিএজি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালেই ঋণের বোঝা অসহনীয় অবস্থায় চলে গিয়েছিল। সেই সময় জিডিপি-র তুলনায় তা ৫২.৫% ছিল। এখন ৮৪%। ফলে দেনা সহন করার ক্ষমতা নিয়ে সংশয় থাকছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে গড় ঋণের বোঝা জিডিপি-র ৬৪.৫%।’’
কংগ্রেস মনে করাচ্ছে, মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতেও ঋণের বোঝা বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজ্যের বাজেট বলছে, ধার ৩.২০ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩.৪০ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। গুজরাত ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সিএজি। শ্রীনতে বলেন, ‘‘গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় মোদী বড় বড় কথা বলতেন। প্রধানমন্ত্রী পদে বসে অর্থব্যবস্থার হাল বিগড়ে দিয়েছেন। তাঁকে বুঝতে হবে, ক্যামেরাজীবী হয়ে বসে থাকলে চলবে না।’’
কী বলছে অর্থ মন্ত্রক? সূত্রের বক্তব্য, কোভিডের সময় বাড়তি খরচ এবং আয় কমাই ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ার কারণ। তা সত্ত্বেও ভারতের ধারের অঙ্ক তুলনায় স্থিতিশীল। টাকার মূল্য বা সুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম। সিংহভাগ দেনাই ভারতীয় মুদ্রায়নেওয়া। বিদেশ থেকে ধারও নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের মাধ্যমে। ফলে বিদেশের বাজারে উত্থান-পতনের ঝুঁকি দেশে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা কম।