—ফাইল চিত্র
মাঝে মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা দেখা দিলেও বাজার উঠে চলেছে। মঙ্গলবার সেনসেক্স প্রথম ৫৩ হাজারের গণ্ডি পার করেছিল। পরে অবশ্য তা নেমে আসে। সপ্তাহ শেষে থিতু হয় ৫৩ হাজারের দোরগোড়ায় (৫২,৯২৫ অঙ্কে)। যা সেনসেক্সের রেকর্ড উচ্চতা। নিফ্টিও তার সর্বকালীন উচ্চতা ১৫,৮৬৯ থেকে এখন মাত্র ৯ পয়েন্ট নীচে। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিকূল খবরকে উপেক্ষা করে বাজারের উপরে ওঠায় কোনও বিরাম নেই। তবে দুশ্চিন্তার মেঘ ঘনাচ্ছে নিঃশব্দে। আর সেটা হল চলতি অর্থবর্ষের (২০২১-২২) প্রথম তিন মাসে সংস্থাগুলির আর্থিক ফল।
মাত্র দু’দিনের মধ্যে শেষ হবে প্রথম ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন)। যে তিন মাসে অর্থনীতি তীব্র ধাক্কা খেয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে। সংক্রমণ আটকাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জারি নিষেধাজ্ঞাগুলি জুড়লে তার অভিঘাত গত বছরের দেশ জোড়া লকডাউনের তুলনায় খুব কম হয়তো হবে না। বিশেষত প্রধান শহরগুলিতে টানা লকডাউন চলার কারণে ব্যাহত হয়েছে ব্যবসায়িক কাজকর্ম। এর প্রভাব কিন্তু অনেক সংস্থার ত্রৈমাসিক ফলাফলে প্রতিফলিত হবে। সেই সময়ে তার প্রভাব পড়তে পারে বাজারে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গৃহস্থের সঞ্চয় অনেকটাই কমেছে গত (২০২০-২১) অর্থবর্ষে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর এপ্রিল থেকে জুন ওই সঞ্চয় ছিল জাতীয় উৎপাদনের ২১%। পরের তিন মাসে তা নেমে আসে ১০.২ শতাংশে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে তা আরও কমে হয় ৮.২%। এই ভাবে সঞ্চয়ের হার নেমে আসা অর্থনীতির পক্ষে শুভ সংবাদ নয়। ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদ কমা সঞ্চয় হ্রাসের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। মোটা টাকা প্রবাহিত হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বাজারে। বাজার এতটা চাঙ্গা থাকার এটাও অন্যতম কারণ। ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সঞ্চয় কমলেও গত এক বছরে নগদে কিন্তু গৃহস্থের সঞ্চয় অনেকটা বেড়েছে। করোনা সঙ্কটে জীবন বেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এবং চিকিৎসা খরচ বাবদ হঠাৎ মোটা টাকার প্রয়োজনের আশঙ্কায় মানুষ ঘরে বেশি টাকা রাখতে চাইছে।
গত বছরের মতো এ বারও বেড়েছে আয়কর রিটার্ন দাখিলের মেয়াদ। হাতে মাস তিনেক সময় থাকলেও রিটার্ন জমার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত হতে পারলে ভাল হয়। টিডিএস সার্টিফিকেট পাওয়া না-গেলেও, সেই সংক্রান্ত তথ্য আয়কর দফতরের পোর্টাল থেকে ফর্ম ২৬ এএস ডাউনলোড করে দেখে নেওয়া যেতে পারে। সময় থাকতে জোগাড় করে রাখতে হবে সব ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণ হয়েছে। সংযুক্ত ব্যাঙ্কগুলির গ্রাহকদের মূল ব্যাঙ্কটির (যেটির সঙ্গে অন্য এক বা একাধিক ব্যাঙ্ক মিশেছে) আইএফএস সি কোড জানতে হবে। তা রিটার্ন ফর্মে লাগবে।
আয়কর দফতর ২০২১-২২ হিসেববর্ষের (অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার) বিভিন্ন রিটার্ন ফর্ম প্রকাশ করেছে। এ বার রিটার্ন জমা হবে তাদের নতুন ই-পোর্টালের মাধ্যমে। ৭ জুন চালুর পরেই তাতে প্রযুক্তিগত সমস্যা ধরা পড়ে। সেখানে তুলতে হবে আয়করদাতাদের নতুন নানা তথ্য, যা পুরনো পোর্টালে ছিল না। যেমন, শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদিতে লগ্নির তথ্য, ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের তথ্য ইত্যাদি। লগ-ইন করে নিজের প্রোফাইলে প্রয়োজনীয় তথ্য সংযোগ করতে হবে আয়করদাতাদের। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ পোর্টালটিকে জটিল বলে মনে করছেন। ফলে আয়করদাতাদের সময় থাকতে একটু সড়গড় হতে হবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)