—প্রতীকী চিত্র।
বাজেটের ধাক্কা কাটিয়ে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেনসেক্স উঠেছিল ১৮২৭। ওই দিন এক সময় ঢুকেও পড়েছিল ৮২ হাজারের ঘরে। ২৫ হাজারে পা রেখে নতুন নজির গড়ে নিফ্টি। তবে দুই সূচকই বড় পতনের মুখে পড়ে তার পরের দিন। রেকর্ড উচ্চতা থেকে নামে যথাক্রমে ৮৮৬ ও ২৯৩ পয়েন্ট। প্রধান কারণ ছিল, আমেরিকার অর্থনীতির আশঙ্কাজনক পরিসংখ্যান। জানা যায়, জুলাইয়ে তাদের শিল্পোৎপাদন ৪৮.৫% থেকে নেমে এসেছে ৪৬.৮ শতাংশে। অকৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র ১.১৪ লক্ষ, যা ২০২১-এর পরে সব থেকে কম। এই খবর আসা মাত্র বিশ্ব জুড়ে ধস নামে শেয়ার বাজারে। তাতে শামিল হয় ভারতের সূচকগুলিও। তলিয়ে যায় টাকা। শুক্রবার এক ডলার হয় ৮৩.৭৫ টাকা।
তার উপর পশ্চিম এশিয়ায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তেহরানে হামাস নেতার নিধনে ইজ়রায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধের পথে নামবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরাকে বিমান হামলা করেছে আমেরিকা। এই উত্তেজনা বাড়লে ও নতুন যুদ্ধের রূপ নিলে অশান্ত পশ্চিম এশিয়া বিশ্ব অর্থনীতি ও শেয়ার বাজারকে ভোগাবে।
চিন্তা রয়েছে দেশের অর্থনীতি নিয়েও। প্রবল তাপপ্রবাহের পরে এ বার অতিবর্ষণ বহু জায়গায় চাষের ক্ষতি করছে। আশঙ্কা, খাদ্যপণ্যের চড়া দামকে এই সমস্যা আরও ঠেলে তুলবে। চলতি সপ্তাহেই (৬-৮ অগস্ট) বৈঠকে বসবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি। সুদ কমানোর আশা করছেন না কেউ। কারণ, খাদ্যপণ্যের আগুন দামে ইতিমধ্যেই জুনের খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৫% ছাড়িয়েছে (৫.০৮%)।
দ্রুত উঠতে থাকা শেয়ার বাজারে এখন বড় সংশোধন জরুরি হলেও, তা হতে পারছে না। কারণ, বহু শেয়ারের দর যোগ্যতার তুলনায় বেশি। শুক্রবার বিদেশি লগ্নিকারীরা যখন ৩৩১০ কোটি টাকার শেয়ার বেচছে, তখন দেশীয় আর্থিক সংস্থা ২৯৯৬ কোটি টাকা ঢালে। ফলে সে দিনও পতন গভীর হতে পারেনি। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ওই দিন যেখানে জাপানের নিক্কেই ৫.৮১%, আমেরিকার ন্যাসড্যাক ২.৪৩% এবং হংকং-এর হ্যাং সেং সূচক ২.০৮% পড়ে, সেখানে সেনসেক্স, নিফ্টির পতনের হার ছিল যথাক্রমে ১.০৮% এবং ১.১৭%।
এই পরিস্থিতিতে অতি ছোট মেয়াদে শেয়ার কেনাবেচা এবং ফিউচার ও অপশনে লেনদেন নিয়ে ছোট লগ্নিকারীদের আবার সাবধান করেছেন বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির কর্ণধার মাধবী পুরী বুচ। আগে তিনি বলেছিলেন, এমন লেনদেনে ৯০% ক্ষেত্রে লোকসান হয়। গত মঙ্গলবার বলেন, ফিউচার ও অপশনের লেনদেনে লগ্নিকারীদের ক্ষতির অঙ্ক বছরে ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ কোটি টাকা। তাঁর পরামর্শ, ফাটকা না খেলে এই টাকা বরং তুলনায় কম ঝুঁকির জায়গায় লগ্নি করা যেতে পারে। যেমন— ফান্ড, বাজারে সংস্থার প্রথম ছাড়া শেয়ার (আইপিও) ইত্যাদি।
প্রায় শেষ সংস্থার ত্রৈমাসিক আর্থিক ফল প্রকাশের মরসুম। এখনও পর্যন্ত এপ্রিল-জুনে তা মিশ্র। গত সপ্তাহে দেখা গিয়েছে মারুতির নিট লাভ ৪৭% বেড়ে হয়েছে ৩৬৫০ কোটি টাকা, টাটা স্টিলের ৭৫% বেড়ে ৯১৯ কোটি এবং কোল ইন্ডিয়ার ৪% বেড়ে ১০,৯৪৩ কোটি টাকা। ব্রিটানিয়ার লাভ বেড়েছে ১১%। টাইটানের কমেছে ৫.৪২%। ৭৪% বেড়ে টাটা মোটরসের লাভ পৌঁছেছে ৫৫৬৬ কোটি টাকায়। সামান্য কমে আইটিসি-র হয়েছে ৫১৭৬ কোটি। সান ফার্মার বেড়েছে ৪০%, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ১০%। স্টেট ব্যাঙ্কের লাভ ১৬,৮৮৪ কোটি থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ১৭,০৩৫ কোটি টাকায়।
জুলাইয়ে জিএসটি বাবদ সরকারের সংগ্রহ ১০.৩% বেড়ে পৌঁছেছে ১.৮২ লক্ষ কোটি টাকায়। অন্য দিকে, কারখানায় উৎপাদন সামান্য হলেও কমেছে। এইচএসবিসি-র উৎপাদন শিল্পের পিএমআই সূচক জুনের ৫৮.৩ থেকে নেমে এসেছে ৫৮.১-এ। চলতি সপ্তাহে জানা যাবে জুলাইয়ে পরিষেবার পিএমআই সূচকের গতিপ্রকৃতি। তার পর গোটা দেশ অপেক্ষা করে থাকবে মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান জানার জন্য।
(মতামত ব্যক্তিগত)