— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গত বছর পাট চাষ করলেও চাহিদার অভাবে ক্ষতির মুখে পড়ায় এ বছর বহু চাষি পাটের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেকে জানিয়েছেন তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, এর ফলে এ বছর কাঁচা পাটের অভাব দেখা দিতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালে পাটের মরসুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে চাষ মার খেয়েছিল। যার জেরে তার দাম বেড়ে গিয়েছিল হু হু করে। এ বছরেও উৎপাদন কমলে চট শিল্প সমস্যায় পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চটকল মালিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে চাপে পড়বে এ রাজ্যের চটকলগুলি। কারণ, দেশের ৭২%-৭৫% চটকলই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
আইন অনুযায়ী খাদ্যশস্য রাখার জন্য চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সেই মতো কেন্দ্রীয় খাদ্য নিগম এবং প্রত্যেক রাজ্য কেন্দ্রকে জানিয়ে দেয় তারা কতগুলি বস্তা কিনবে। কেন্দ্র সেই মতো বরাত দেয় চটকলগুলিকে। গত রবি মরসুমে কত বস্তা কেনা হবে, তা আগেভাগে জানিয়ে রেখেছিল রাজ্যগুলি। চট শিল্প সূত্রের বক্তব্য, তার ভিত্তিতেই চটকলগুলি বস্তা উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু পরে বহু রাজ্যই প্রতিশ্রুতির তুলনায় কম বস্তা কেনে। মূল কারণ তাদের খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিয়ে দেওয়া। সব মিলিয়ে চটের বস্তার চাহিদাও কমে যায়। তার জেরে পাটের চাহিদাও মুখ থুবড়ে পড়ে। জোগান ও চাহিদার মধ্যে এই ফারাকের জন্য বাজারে পাটের দাম কমে যায়। চটকল মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (আইজেএমএ) তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যগুলি প্রথমে জানিয়েছিল, তারা ২২.৮৬ লক্ষ বেল চটের বস্তা (১ বেল মানে ৫০০ বস্তা) কিনবে। কিন্তু বাস্তবে তারা কিনেছে ১৪.৫২ লক্ষ বেল। ৮.৩৪ লক্ষ বেল কম। এর ফলেই চটকলগুলি বস্তার উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে। কমেছে কাঁচা পাটের চাহিদা। দামে মার খেয়েছেন চাষিরা।
পাট চাষিদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকেও কুইন্টাল প্রতি ৮০০-১০০০ টাকা কমে কাঁচা পাট বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অনেকেই এ বছর পাটের পরিবর্তে তিল, বাদাম, কলা বা অন্য কিছু ফলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বনগাঁর ধর্মপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পাট চাষি গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘গত পাট মরসুমে ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। ১৬,০০০ টাকা লোকসান হয়েছিল। এ বার ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করব। বাকিটাতে তিল।’’ একই ভাবে পাটের চাষ কমানোর কথা জানালেন তারকেশ্বরের রবীন্দ্র প্রামাণিক এবং বনগাঁর গাঁদাপোতা পঞ্চায়েতের সুদীপ মণ্ডল। রবীন্দ্র জানান, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন তিনি। লোকসান হওয়ায় এ বার পাট চাষের কথাই ভাবছেন না। তার বদলে জমিতে তিল এবং বাদামের বিজ ফেলেছেন। ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে সুদীপের লোকসান হয়েছিল ১০,০০০ টাকা। এ বার মাত্র ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করবেন। তিনি জানান, তাঁর মতো বহু চাষিই এ বার পাটের পরিবর্তে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন।
এ দিকে বস্তার বরাত কমায় সমস্যায় পড়েছে চটকলগুলিও। আইজেএমএ-র চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্ত বলেন, ‘‘বরাতের অভাবে ইতিমধ্যেই চটকল বন্ধ হতে শুরু করেছে। অনেক কলে সপ্তাহে ৪-৫ দিনের বেশি কাজ হচ্ছে না। শিফট কমেছে। প্রায় ৫০,০০০ কর্মী কাজ হারিয়েছেন। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তক্ষেপের জন্য আর্জি জানিয়েছি আমরা।’’