—প্রতীকী চিত্র।
পেঁয়াজ এবং বাসমতী চালের রফতানির জন্য যে ন্যূনতম দাম ধার্য ছিল, শুক্রবার তা তুলে নিল কেন্দ্র। বিদেশের বাজারে সেগুলি বিক্রিতে উৎসাহ দিতে পেঁয়াজের রফতানি শুল্কও ৪০% থেকে কমিয়ে ২০% করা হয়েছে। রাজ্যের ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, দেশে পেঁয়াজের দাম এখনও চড়া। সরকারের এই পদক্ষেপ তা আরও বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার চেষ্টায় জল ঢালতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, আসন্ন মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে চোখ রেখে এটা মোদী সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। পেঁয়াজের রফতানি তোলা হল মহারাষ্ট্রের চাষিদের খুশি করতে। রফতানি থেকে আয় বেশি হয় বলে চড়া আমদানি শুল্ক এবং ন্যূনতম দামে আপত্তি ছিল তাঁদের। অন্য দিকে, বাসমতী চাল হরিয়ানার অন্যতম প্রধান কৃষি পণ্য। তাই সেটিরও রফতানি অবাধ করা হল। এর ফলে পশ্চিমঙ্গে পেঁয়াজের অভাব দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন্সের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে।
হালে খুচরো বাজারে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বাঁধা ৪% লক্ষ্যের নীচে নেমেছে। কিন্তু খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এখনও অস্বস্তি রয়েছে। এ দিনও শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে আরও কিছুটা পথ চলা বাকি। এমন সময়ে পেঁয়াজ এবং বাসমতি চালের উপর থেকে রফতানির বিধিনিষেধ পুরোটা তুলে নেওয়ার ফলে অনেকেরই আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথা তুলবে। কারণ, দেশের বাজারে জোগানে টান পড়তে পারে।
এ দিকে রাজ্যে পেঁয়াজের আমদানি ইতিমধ্যেই কমেছে। ফলে কিছু দিন যাবৎ বেড়ে গিয়েছে তার দাম। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এই সময়ে নাসিক থেকে পেঁয়াজ এখানে আসে না। দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে কেনা হয়। কিন্তু ওই সব রাজ্যে বৃষ্টির জলে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য সেখান থেকেও আমদানি কমেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম গত ১০ দিনে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায় উঠে গিয়েছে। এই সময়ে রফতানি পুরোপুরি অবাধ করে দেওয়ার ফলে রাজ্যে পেঁয়াজের আমদানি আরও কমে তার দাম আরও বাড়তে পারে বলে আমার আশঙ্কা।’’ কেন্দ্রীয় সমবায় সংস্থা এনএএফইডি এবং এনসিসিএফর মজুত থেকে রাজ্যে পেঁয়াজ সরবরাহ করার জন্য রজ্যের মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছেন বলে জানান রবীন্দ্রনাথবাবু।
দেশে সরবরাহ ঠিক রাখতে পেঁয়াজ এবং বাসমতী চালের ন্যূনতম রফতানি মূল্য ধার্য করা হয়েছিল। গত মে মাসে পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও নির্দেশ দেওয়া হয় যে, কমপক্ষে প্রতি টন ৫৫০ ডলারের (৪৬,১৫৬ টাকা) নীচে রফতানি করা যাবে না। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাসমতী চালের ন্যূনতম রফতানি মূল্য ধার্য করা হয়েছিল টন প্রতি ৯৫০ ডলার (৭৯,৭২৪ টাকা)।
দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম অনেকটাই উঁচুতে। ক্রেতা বিষয়ক দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশে প্রতি কিলোগ্রাম পেঁয়াজের গড় দাম ছিল ৫০.৮৩ টাকা। কিছু অঞ্চলে তা বিক্রি হচ্ছে ৮৩ টাকায়। বৃষ্টির ফলে অনেক রাজ্যেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে বলে খবর। এই সময়ে রফতানি অবাধ করে দেওয়ার ফলে দেশ জুড়ে দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে।