আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন
রুটিন মেনেই মঙ্গলবার সকালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসছে। সুদের হার কোন পথে এগোবে, সেই ইঙ্গিতই দেবেন গভর্নর রঘুরাম রাজন। কিন্তু তার আগে ক্ষমতা ছাঁটাই নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের টানাপড়েন যে- ভাবে তুঙ্গে উঠেছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। আজ এক কদম পিছিয়ে শান্তির বার্তা দিয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার না- কমালে ফের সংঘাত চরমে উঠতে পারে।
মোদী সরকার মনে করছে, আর্থিক বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করতে এখনই সুদের হার কমানো দরকার। তা হলে শিল্পের জন্য ঋণ সহজলভ্য হবে। এটাই সুদের হার কমানোর আদর্শ সময়। কিন্তু রঘুরাম রাজন তা মনে করছেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে কেন্দ্র। অর্থনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা— বেশির ভাগেরই ধারণা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ যাত্রায় সুদের হার অপরিবর্তিত রাখতে চলেছে।
দিন দশেক আগেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের ডানা ছাঁটার প্রস্তাব পেশ করেছিল। মন্ত্রকের প্রকাশিত আর্থিক ক্ষেত্রের খসড়া বিধিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়, সুদের হার ঠিক করার ক্ষমতা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাত থেকে কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে চলে যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বদলে একটি ৭ সদস্যের সুদ নীতি কমিটি ওই হার ঠিক করবে। ৭ জনের মধ্যে ৪ জনকেই কেন্দ্র নিয়োগ করবে। গভর্নরের কোনও ‘ভেটো পাওয়ার’-ও থাকবে না।
আজ অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বনাম মোদী সরকারের সংঘাতে এক কদম পিছু হটার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব রাজীব মহর্ষি বলেন, ‘‘এই খসড়া বিধি সরকারের মত নয়। সরকার সংসদে যে-বিল বেশ করবে, সেখানেই তার নীতি স্পষ্ট হবে।’’ মহর্ষির যুক্তি, অর্থ মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। প্রসঙ্গত, ওই খসড়া প্রকাশের পরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়ে অর্থ মন্ত্রক। তখন মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম যুক্তি দিয়েছিলেন, আর্থিক ক্ষেত্রের আইনি সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের প্রস্তাব মেনেই খসড়াটি তৈরি হয়েছে। কিন্তু কমিশনের সদস্য এম গোবিন্দ রাও যুক্তি দেন, কমিশন এমন সুপারিশ করেনি। আজ মহর্ষিও সে কথা মেনে নিয়েছেন।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আমরা আসলে বলতে চাইছি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কথা শুনে চললে আমরাও ঝগড়া করব না।’’ কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে অর্থনৈতিক যুক্তির উপর ভর করেই সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ও মানছেন কর্তারা। আর, সেখানেই দু’তরফের মধ্যে মতের অমিল হওয়ার সম্ভাবনা।
অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি: পাইকারি বাজারে দর কমছে। পেট্রোপণ্যের দাম অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি যথেষ্ট হয়েছে। খাদ্যশস্যের রেকর্ড ফলনের আশা রয়েছে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম এখনই বাড়বে, এমন আশঙ্কা কম। তাই সুদের হার কমানোর এটাই আদর্শ সময়। মন্ত্রকের আরও যুক্তি, আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে সরকার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাই সুদ কমানোর পক্ষেই সওয়াল তাদের।
এর আগে জুন মাসে সুদের হার কমিয়েছিলেন রাজন। কিন্তু গভর্নর তখনও মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেন এবং অর্থনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। অর্থ মন্ত্রকের ক্ষোভ, তার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার তেমন ভাবে কমায়নি।
উল্টো দিকের যুক্তি হল, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি কমলেও খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ছে। আজ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সুদ কমার আশা দেখছি না। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে বলেই খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ছে।’’ এইচএসবিসি ব্যাঙ্কের ভারতীয় প্রধান নয়না লাল কিদওয়াই কিন্তু মনে করছেন, সুদের হার কমবে।
তাঁর যুক্তি, ‘‘যদি কমাতেই হয়, তাড়াতাড়ি সুদ কমানোই ভাল। বৃষ্টি এখনও পর্যন্ত ভাল হয়েছে। এই মুহূর্তে সুদের হার কমলে শিল্প লাভবান হবে। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়বে।’’ ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের দিক থেকে যেমন চাপ রয়েছে, তেমনই শিল্পমহলের দিক থেকেও রঘুরাম রাজনের কাছে সুদ কমানোর দাবি উঠেছে।
রাজন সেই দাবি মেনে নেবেন, না কি এই সুদের হার কমানোকে ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সংঘাত ফের চরমে উঠবে, মঙ্গলবার তারই অপেক্ষা।