প্রতীকী ছবি।
বাজেটের আরও একটি ঘোষণা থেকে পিছিয়ে এল মোদী সরকার। ঘাড়ে বিপুল সুদের বোঝা সত্ত্বেও জানাল, চলতি অর্থবর্ষে সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বন্ড (সভরিন) বিদেশে ছেড়ে ডলারে ঋণ নেওয়ার পথে হাঁটছে না তারা। লগ্নির জন্য কম সুদে তহবিল পেতে বাজেটে ডলারে বন্ড ছেড়ে ধারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। লক্ষ্য ছিল সুদের বোঝা কমানো। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলে বিভিন্ন মহল। অর্থনীতিবিদেরা সতর্ক করে বলেন, ডলারে টাকার দাম পড়লে এতেই বরং ঋণের বোঝা বাড়ে। ঝুঁকি থাকে ধারের ফাঁদে জড়ানোর। তার উপরে এ দিনই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই জুন ত্রৈমাসিকে বৈদেশিক ঋণ ১,৪১০ কোটি ডলার বেড়েছে ভারতের। হয়েছে ৫৫,৭৪০ কোটি। যদিও চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি ওই ত্রৈমাসিকে আগের বছরের তুলনায় ২% কমেছে।
দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে এ দিনই অর্থ মন্ত্রকের হিসেবে প্রকাশ, সুদের বোঝা বাড়ছেই। সরকারি কাজ চালাতে ১০০ টাকা ধার করলে ৯৩ টাকাই যাচ্ছে পুরনো ধারের সুদ মেটাতে। এই অবস্থায় অর্থ মন্ত্রক বলেছে, অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২.৬৮ লক্ষ কোটি টাকাই বাজার থেকে ধার করবে তারা। তার বেশি নয়।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি নিয়ে বেকায়দায় থাকা সরকার এখন ধারের ক্ষেত্রে সতর্ক। তাই ডলারে বৈদেশিক ঋণের সিদ্ধান্ত আপাতত রদ হল। কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের মতো অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার নানা পদক্ষেপে রাজস্ব লোকসান মেনেও বাজার থেকে বেশি ধার করার রাস্তায় হাঁটল না তারা। ক্ষতি সামাল দিতে যা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা দানা বাঁধছিল। ফলে স্বস্তি বন্ড বাজারে। কেন্দ্র বেশি ধার করতে আরও বন্ড ছাড়বে, এই চিন্তায় বন্ডের ইল্ড বেড়ে সেগুলির বাজার দর পড়ছিল।
আজ আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তী জানান, বিদেশে বন্ড ছেড়ে ডলারে ঋণ নেওয়ার আগে সব খতিয়ে দেখতে হবে। এই অর্থবর্ষে যে কেন্দ্র সে পথে হাঁটছে না, তা বুঝিয়ে অতনু বলেন, এ বছর সব বন্ডেই টাকায় ধার নেওয়া হবে। জানান, আপাতত রাজকোষ ঘাটতিকে ৩.৩ শতাংশের লক্ষ্যে বেঁধে রাখতেও অনড় তাঁরা।
বস্তুত, ডলারে ঋণ নেওয়ার প্রশ্নেই সরতে হয় আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গকে। এই পরিকল্পনা তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রকেও সরানো হয়। অভিযোগ, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ওই ঋণের ভাল-মন্দ ব্যাখ্যা না করেই সায় দেন।
তবে সুদ নিয়ে চিন্তা বহাল। অর্থ মন্ত্রকের রাজকোষের হিসেবে স্পষ্ট, অর্থবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসে নতুন পরিকাঠামো খাতে খরচের থেকে সুদ মেটাতে লেগেছে অনেক বেশি টাকা। রাজকোষ ঘাটতিও গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৭৯% ছুঁয়ে ফেলেছে।