কেন্দ্র চুপ, আশ্বাসে আটকে রাজ্যও

৮০ ছাড়াল পেট্রল, টুঁ শব্দ নেই শুল্কে

কিন্তু তা সত্ত্বেও কর ছাঁটাই নিয়ে মুখে কুলুপ প্রসঙ্গে সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন কর্তা দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের অভিমত, দেশের অর্থনীতিতে তেজী ভাব কার্যত নেই। রাজস্বের জন্য তেলের উপরই ভরসা করছে সরকার। তাঁর দাবি, শুল্ক না কমালে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার অর্থনীতির পক্ষে বিপজ্জনক হবে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৬:১৩
Share:

সদ্য ৭০ টাকা ছাড়িয়েছে ডিজেল। বৃহস্পতিবার কলকাতায় ৮০ টাকা ছাড়িয়ে গেল পেট্রলও। জ্বালানির এই অগ্নিমূল্যে নাভিশ্বাস দশা সাধারণ মানুষের। তেলে কর খতিয়ে দেখার সময় এসেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার কর্ণধারও। কিন্তু এত কিছুর পরেও পেট্রল, ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই নিয়ে মুখে কুলুপ কেন্দ্রের। ‘মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন’-এর আশ্বাসে আটকে রাজ্যও। আর অন্যান্য অধিকাংশ রাজ্যের মুখে টুঁ শব্দ নেই এ নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা তাই প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি এখন রাজকোষ ভরতে তেলই একমাত্র হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির? দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের অর্থনীতি কি তবে এতটাই দেউলিয়া?

Advertisement

বুধবার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, কর ছাঁটলে লিটারে ২৫ টাকা তেলের দাম কমাতে পারে কেন্দ্র। এ দিন এইচপিসিএলের সিএমডি মুকেশ কুমারও বলেন, ‘‘তেলের উপর শুল্ক চাপানোর প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’

কিন্তু তা সত্ত্বেও কর ছাঁটাই নিয়ে মুখে কুলুপ প্রসঙ্গে সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন কর্তা দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের অভিমত, দেশের অর্থনীতিতে তেজী ভাব কার্যত নেই। রাজস্বের জন্য তেলের উপরই ভরসা করছে সরকার। তাঁর দাবি, শুল্ক না কমালে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার অর্থনীতির পক্ষে বিপজ্জনক হবে।

Advertisement

‘অচ্ছে দিন’

• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল তলানিতে থাকাকালীন ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে ন’বার উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। সেখানে তা কমেছে মাত্র এক বার।

• শুধু ওই ১৫ মাসেই পেট্রল-ডিজেলে বাড়তি উৎপাদন শুল্ক চেপেছে ১১.৭৭ এবং ১৩.৪৭ টাকা। কেন্দ্রের রাজকোষে ঢুকেছে ২.৪২ লক্ষ কোটি।

কেন্দ্রের দাবি

• প্রতি টাকা উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ে রাজস্ব ক্ষতির অঙ্ক ১৩,০০০ কোটি টাকা। যা সামাল দেওয়া শক্ত।

• শুল্ক ছাঁটলে কঠিন হবে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা। কিন্তু যে কোনও মূল্যে ওই লক্ষ্যপূরণ জরুরি।

• বরং সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ভ্যাট ছাঁটুক রাজ্যগুলি।

বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞাসা

• ঘাটতি সামলাতে তবে কি একমাত্র ভরসা তেলে বসানো শুল্কই?

• অর্থবর্ষের ১০ মাস বাকি। এখনই ঘাটতি নিয়ে চিন্তিত কেন কেন্দ্র?

এখন প্রশ্ন

• অশোধিত তেলের দাম কম থাকার সময়ে যদি কেন্দ্র ও ভাবে শুল্ক চাপায়, তবে তা বাড়ার সময়ে তারা শুল্ক ছাঁটার পথে হাঁটবে না কেন?

• বুধবার পেট্রল-ডিজেলের মূল দাম (যার উপর উৎপাদন শুল্ক ও ভ্যাট বসে) লিটারে ছিল ৪০ টাকার কিছুটা উপরে। তাহলে এত টাকা করের বোঝা মানুষ বইবেন কেন?

উৎপাদন শুল্ক

• পেট্রল: ১৯.৪৮ টাকা

• ডিজেল: ১৫.৩৩ টাকা

যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট)*

• পেট্রল: ১৬.০৫ টাকা

• ডিজেল: ১০.৫৫ টাকা

* বুধবারের দামের হিসেবে। প্রতি লিটারে

এ দিন কলকাতায় ডিলারদের কমিশন বাদে পেট্রলের দামের ৪৬% গিয়েছে উৎপাদন শুল্ক ও ভ্যাটে। ডিজেলে তা ৩৭%। তেলের মূল দাম ৪০ টাকার উপরে। এই মূল দামের উপর উৎপাদন শুল্ক চাপিয়ে যে দাম হয়, তার উপর পেট্রলে ২৫% ও ডিজেলে ১৭% ভ্যাট বসে রাজ্যে। ফলে উৎপাদন শুল্ক যদি কমে, তাহলে ভ্যাট বাবদ আয়ও কমবে। প্রশ্ন উঠছে, সে জন্যই কি এ নিয়ে সর্বাত্মক ভাবে সরব নয় রাজ্যগুলি? এ নিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও অর্থ সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী দেখবেন বলে আশ্বাস তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement