প্রতীকী ছবি।
পরিবহণ জ্বালানির উৎপাদন শুল্ক দফায় দফায় বাড়িয়ে কেন্দ্র নিজেদের রাজকোষ তো ভরছেই। সেই সঙ্গে গৃহস্থের হেঁশেলে ব্যবহৃত এলপিজি বা কেরোসিনের মতো রান্নার জ্বালানির ভর্তুকি নামিয়ে আনার কথাও স্বীকার করেছে অতীতে। সেই খাতে খরচ তারা ঠিক কতটা কমিয়েছে, তা স্পষ্ট হল লোকসভায় সরকারের দেওয়া তথ্যে।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারীর (দেব) এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে তেল প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি যে পরিসংখ্যান পেশ করেছেন তাতে স্পষ্ট, পাঁচ বছর আগে (২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে) এলপিজি এবং কেরোসিনের খাতে তাদের মোট ভর্তুকি গুনতে হয়েছিল ২৬,৮০২ কোটি টাকা। যা ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩,২৫৭ কোটি টাকায়। কিন্তু পরের দু’টি অর্থবর্ষে তা এতটাই কমিয়ে আনা হয় যে, ভরা করোনার বছরে (২০২০-২১) সরকারকে ওই খাতে খরচ করতে হয়েছে ১১,৮৯৫ কোটি টাকা (সবিস্তার সারণিতে)। অর্থাৎ, পাঁচ বছর আগের তুলনায় তা অর্ধেকেরও কম। আর তিন বছর আগের হিসাবে এক-চতুর্থাংশের কিছু বেশি।
বছর দুই আগেই অভিযোগ উঠেছিল, গৃহস্থের রান্নায় ব্যবহৃত এলপিজির ভর্তুকি কমিয়েছে চলেছে সরকার। কোনও কোনও জায়গায় তা উঠেই গিয়েছে। পরে কেন্দ্র জানায়, ভর্তুকি তুলে দেওয়া হয়নি। আসলে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজনই পড়ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রের নেওয়া কৌশলের জোরেই পরিস্থিতি এই জায়গায় পৌঁছেছে। ভর্তুকিযুক্ত সিলিন্ডারের দাম এতটাই বাড়ানো হয়েছে যে, তা পৌঁছে গিয়েছে ভর্তুকিহীন সিলিন্ডারের দামের কাছাকাছি। তেল সংস্থা সূত্রের খবর, কলকাতায় এখন ১৪.২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডারে ভর্তুকি মেলে ২০ টাকারও কম। কেন্দ্রের অবশ্য বক্তব্য, এই খাতে ভর্তুকি ছাঁটাই করে যাঁদের সত্যিই ভর্তুকি প্রয়োজন তাঁদের বিশুদ্ধ জ্বালানির সংযোগ দিতে চাইছে তারা। সেই লক্ষ্যেই চালু করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা। যেখানে দরিদ্র নাগরিকদের নিখরচায় দেওয়া হয় গ্যাস সংযোগ। পাশাপাশি, ভর্তুকির টাকা সাশ্রয় করে করোনাকালে তা বিভিন্ন জনকল্যাণ প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে।
অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের এমন দাবি সত্ত্বেও বহু মানুষ যে এখনও রান্নার জন্য কাঠকয়লা ব্যবহার করছেন তা উঠে এসেছে নীতি আয়োগের রিপোর্টে। আর্থিক সমস্যার ফলেও যে উজ্জ্বলা যোজনার বহু গ্রাহক দ্বিতীয় সিলিন্ডার কিনতে পারছেন না, তা-ও অতীতে স্পষ্ট হয়েছিল। বস্তুত, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এলপিজির ভর্তুকি এবং উজ্জ্বলা যোজনার ভর্তুকি কতটা কমেছে, তা-ও এ দিন স্পষ্ট হয়েছে সংসদে কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যানে।