—প্রতীকী চিত্র।
লাইফ সার্টিফিকেট বা জীবন শংসাপত্র জমার ক্ষেত্রে সম্প্রতি ব্যাঙ্ক-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলকে পেনশনভোগীদের আধার ভিত্তিক মুখের ছবিকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার উপরে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। যে প্রক্রিয়া ঘরে বসেই করা সম্ভব অ্যান্ড্রয়েডচালিত স্মার্ট ফোনের গুগ্ল স্টোরে থাকা অ্যাপ ডাউনলোড করে। তবে কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, আদতে এই ধরনের ডিজিটাল পরিষেবা ক’জন প্রবীণ মানুষকে সাহায্য করতে পারবে সন্দেহ থাকছেই। কারণ, অনেকের স্মার্ট ফোন নেই। যাঁদের আছে, তাঁদের বড় অংশ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন না। বরং তারা বলছে, কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসারেই নথিভুক্ত ডাক্তার, গেজেটেড অফিসার, পুলিশ অফিসার-সহ নির্দিষ্ট পদাধিকারী পেনশনভোগীর জীবিত আছেন বলে শংসাপত্রে সই করতে পারেন। যা নির্দিষ্ট তথ্য সহকারে জমা দিলে কাজ মিটে যায়। কিছু ব্যাঙ্ক এমন পদ্ধতিতে জমা নেয় বলেও খবর। তবে অভিযোগ, অনেক ব্যাঙ্ক তা মানতে চায় না।
ইউনিয়নগুলির দাবি, ওই সব ব্যাঙ্ক হয় পেনশনভোগীকে সশরীরে ব্যাঙ্কের শাখায় এসে জীবন শংসাপত্র জমা দিতে বলে কিংবা বাড়িতে বসে তা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আধার ভিত্তিক আঙুলের ছাপের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য কিংবা মুখের ছবি ব্যবহার করতে বলে। কিছু ব্যাঙ্কে এখন ভিডিয়ো মারফত লাইফ সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির দাবি, এই ধরনের পদ্ধতি ছাড়া পেনশনভোগী যে জীবিত আছেন, সে ব্যাপারে পুরো নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে কর্মী সংগঠনগুলির বক্তব্য, এতে অশক্ত এবং অসুস্থ পেনশন প্রাপকদের সমস্যা মেটেনি। সাহায্য করার মতো কেউ নেই যাঁদের, তাঁরা আরও অসহায় অবস্থায় পড়ছেন। এই প্রেক্ষিতে পেনশনভোগীদের বাড়ি থেকে ব্যাঙ্কই যাতে শংসাপত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে, সেই দাবিও তুলেছে তারা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের তরফে নির্দেশিকা জারির আবেদন করেছে।
লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে দুয়ারে ব্যাঙ্কিং (ডোরস্টেপ) পরিষেবা চালু রয়েছে। সংগঠনগুলির দাবি, সেই পদ্ধতিও খুব একটা সহজ নয়। অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজ়ড ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, “বহু পেনশনভোগী চলাফেরা করতে পারেন না, অসুস্থ। অনেকে চোখেও ভাল করে দেখতে পান না। কেউ কেউ একেবারে একা, সাহায্য করার মতো কেউ নেই। তাঁদের পক্ষে ডিজিটাল ব্যবস্থায় জীবন শংসাপত্র জমা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ককে বাড়িতে গিয়ে শংসাপত্র নিয়ে আসার বিশেষ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও নাগরিক মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক সৌম্য দত্ত এবং বিশ্বরঞ্জন রায়ের সুপারিশ, “এ জন্য ব্যাঙ্কের কর্মী এবং অফিসারদের নিয়ে অক্টোবর এবং নভেম্বরে বিশেষ দল গঠন করুক ব্যাঙ্ক। আর সব ব্যাঙ্ক যাতে সেই নিয়ম মানে, তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ নির্দেশিকা জারি করুক কেন্দ্রীয় সরকার।’’
তবে বাড়ি থেকে পেনশনভোগীর জীবন শংসাপত্র নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ব্যাঙ্কগুলি কর্মীর অভাবের কথা বলে। এআইবিইএর সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, “কর্মীর অভাবে গ্রাহকদের অনেক পরিষেবাই ধাক্কা খাচ্ছে বলে আমরা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এর জন্য নতুন কর্মী নিয়োগের দাবিতে নভেম্বরে ধর্মঘটে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’’