পাঁচ রাজ্যের ভোটের মুখে পেট্রল-ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় উদ্বেগে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সামাল দিতে দুই পেট্রোপণ্যের দাম লিটারে আড়াই টাকা করে কমিয়েছে তারা। কিন্তু এর মধ্যে ১ টাকার দায় তারা ঠেলে দিয়েছে তেল সংস্থাগুলির কাঁধে। অনেকে মনে করছেন, রাজকোষ ঘাটতি মাত্রা ছাড়া হওয়ার ভয়েই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।
অর্থনীতির বিশ্লেষকদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, এতে ঝুঁকি আদৌ কমছে না। বরং অন্য পথে বাড়ছে বিপদ। কারণ, লিটারে ১ টাকার দায় নিতে গিয়ে বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা মুনাফা কমতে পারে তেল সংস্থাগুলির। অশোধিত তেলের দাম বাড়ায় তাদের রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনে আরও ভর্তুকি দিতে হতে পারে। ফলে সরকারের ঘরে আসতে পারে কম ডিভিডেন্ড। সেই চাপও আদতে পড়বে রাজকোষ ঘাটতির উপরে।
রাজকোষ ঘাটতির সামনে ঝুঁকি রয়েছে আরও। যেমন, বিলগ্নিকরণে ধাক্কা, জিএসটি সংগ্রহ প্রত্যাশিত না হওয়া। চলতি অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণ থেকে ৮০,০০০ কোটি টাকা ঘরে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এসেছে মাত্র ৯,২০০ কোটি টাকা। এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণ ধাক্কা খেয়েছে। আরও একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের পরিকল্পনা তৈরি। কিন্তু শেয়ার বাজারের অস্থিরতার ফলে তা আটকে রয়েছে। পাশাপাশি, জিএসটি থেকে আয় এখনও প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছয়নি।
আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ অবশ্য মঙ্গলবার সরকারি ভাবেই এই আশঙ্কার কথা খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ সব খবর বানানো। কিন্তু বাস্তব হল, বিলগ্নিকরণের রূপরেখা নিয়ে বৃহস্পতিবারই ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে কোর গ্রুপ বৈঠকে বসছে। সরকারি সূত্রের দাবি, ভাবনায় রয়েছে ন্যাশনাল ইনশিওরেন্স, ইউনাইটেড ইনশিওরেন্স ও ওরিয়েন্টাল ইনশিওরেন্স মিলিয়ে একটি বিমা সংস্থা তৈরি করে তার শেয়ারও বাজারে ছাড়া।
এই অবস্থায় অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, আয় কমলেও লোকসভা ভোটের বছরে খরচের কাটছাঁটের রাস্তা বিশেষ নেই। সে ক্ষেত্রে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখতে কিছু খরচ, বিশেষ করে জ্বালানিতে ভর্তুকি পরের অর্থবর্ষের খাতায় ঠেলে দেওয়া হতে পারে।