প্রতীকী ছবি।
অর্থনীতিতে ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাব কতটা পড়বে তা নিয়ে যখন চর্চা শুরু হয়েছে, ঠিক সেই সময়েই এল গাড়ি ব্যবসায় ধাক্কার খবর!
দেশের প্রথম সারির কয়েকটি গাড়ি সংস্থা ইতিমধ্যেই গত ডিসেম্বরে তাদের পাইকারি বিক্রি (ডিলারদের সংস্থাগুলি যে গাড়ি বিক্রি করে) ধাক্কা খাওয়ার ছবি তুলে ধরেছে। বছরের শেষ মাসে বিক্রি কমবে বলে এর আগে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল গাড়ি ডিলারেরাও। এ বার তাদের সংগঠন ফাডার রিপোর্টে স্পষ্ট হল, তা অনেকটাই সত্যি হয়েছে। বুধবার শোরুম থেকে গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ফাডা জানিয়েছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত মাসে সার্বিক ভাবে দেশে গাড়ির খুচরো ব্যবসার (শোরুম থেকে বিক্রি হওয়া গাড়ি) ১৬% সঙ্কোচন ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিক্রি কমেছে প্রায় ৩২.৫%। দেশে তিন চাকার গাড়ি বিক্রি অনেকটা বাড়লেও এ রাজ্যে মাথা নামিয়েছে সেটাও। বস্তুত, গত মাসে পশ্চিমবঙ্গে সব ধরনের গাড়ির বিক্রিই কমেছে।
ভারতে উৎপাদনমুখী শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ গাড়ি। অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে যা অনেক আগে থেকেই গাড্ডায় পড়েছে। আর অতিমারির হানায় তা আরও তলিয়ে গিয়েছিল। পরে সেই চাহিদা কিছুটা বাড়লেও ইদানীং সেমিকনডাক্টরের মতো যন্ত্রাংশের জোগানের অভাবে ফের সঙ্কটে পড়েছে উৎপাদন। ফলে পূরণ করা যাচ্ছে না সেই চাহিদা।
সাধারণত বছর শেষের মজুত ভান্ডার খালি করতে উৎসবের মরসুমের পরে গাড়ি সংস্থাগুলি কিছু ছাড় দেয়। ক্রেতাদের মধ্যেও সেই সুবিধা নেওয়ার আগ্রহ থাকে। তার ফলে ডিসেম্বরে বিক্রি বাড়ে। সে কথা মনে করিয়ে ফাডার প্রেসিডেন্ট ভিঙ্কেশ গুলাটির দাবি, এ বারে সেই আগ্রহ দেখা যায়নি। সেমিকনডাক্টরের জোগানের সমস্যার জন্য যাত্রী গাড়ি বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে। আবার গাড়ি কেনার খরচ বৃদ্ধি, গ্রামে আগ্রহে ভাটা, বাড়ি থেকে কাজের পরিধি বৃদ্ধি ও ওমিক্রনের শঙ্কা দু’চাকার বিক্রিতে প্রভাব ফেলেছে। শুধুমাত্র পরিকাঠামোয় সরকারি খরচ বৃদ্ধির ফলে বাণিজ্যিক গাড়ি ব্যবসায় গতি এসেছে কিছুটা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় দেশে সার্বিক ভাবে গাড়ি বিক্রি কমেছে ৬.৩%।
ফাডার রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গে যাত্রী, দুই ও তিন চাকা, বাণিজ্যিক এবং ট্র্যাক্টর— সব ধরনের গাড়ির বিক্রিই কমেছে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে তিন চাকা। যাত্রিবাহী ও দু’চাকার গাড়ির ব্যবসায় সঙ্কোচনও বিপুল।
ডিলারদের ৩১.২% জানুয়ারিতে ব্যবসায় ফের সঙ্কোচনের আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন। ৩৯.৩ শতাংশের মতে, পরিস্থিতি কার্যত এক থাকবে। বাকিরা অবশ্য আশাবাদী। বছর শুরুতে ওমিক্রনের প্রভাব ব্যবসায় কতটা পড়ে, সেটাই এখন দেখার।