বুধবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে ধর্মেন্দ্র প্রধান।
রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (গেইল)-র পাইপলাইন প্রকল্পে ৫১৭৬ কোটি টাকা তহবিল জোগানোর ব্যাপারে সিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। যা প্রকল্পের মোট খরচের ৪০ শতাংশ। বাকি খরচের দায়িত্ব গেইল-ই নেবে।
দেশের বৃহত্তম এই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ সমেত পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যকে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা, যাতে শিল্প-বাণিজ্য, গৃহস্থালি ও পরিবহণ ক্ষেত্রের প্রয়োজন মেটাতে তারা সহজেই ব্যবহার করতে পারে প্রাকৃতিক গ্যাস। তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বুধবার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে বলেন, উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা এই অঞ্চলের হাল ফেরাতেই এই প্রথম কোনও পাইপলাইন প্রকল্পে সামিল হল কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি, এই পাইপলাইন প্রকল্পের আওতাতেই কলকাতা-সহ বেশ কিছু শহরের জন্য রান্নার কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস বণ্টন প্রকল্পেও সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
২৫৩৯ কিলোমিটার লম্বা এই জগদীশপুর-হলদিয়া ও বোকারো-ধামরা পাইপলাইন (জেএইচবিডিপিএল) প্রকল্প সরকারি অনুমোদন পেয়েছিল ২০০৭ সালেই। কিন্তু অর্থের অভাবে তা থমকে ছিল। প্রধান বলেন, ‘‘দেশের সব অঞ্চলের মধ্যে উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় রাখতে দায়বদ্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাকে বাস্তব রূপ দিতেই পাইপলাইনের মতো পরিকাঠামো প্রকল্পে সামিল হওয়ার ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ নিল কেন্দ্র।’’ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি এতে সায় দিল। প্রকল্পটি যে-পাঁচটি রাজ্যকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করবে, সেগুলি হল: উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ। প্রকল্পের মোট খরচ ১২,৯৪০ কোটি টাকার ৪০% (৫১৭৬ কোটি টাকা) গেইল-কে জোগাবে কেন্দ্র। বাকি টাকা দেবে গেইল।
পরিবেশ দূষণ এড়িয়ে শিল্পে, পরিবহণে ও ঘরোয়া কাজে ব্যবহার করা যায় প্রাকৃতিক গ্যাস। তাই কেন্দ্র এর ব্যবহার বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে বলে সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। ন্যায্য দরে এই জ্বালানি মিললে তা পূর্বাঞ্চলের শিল্পায়নের পথে বাধা কাটাতে সাহায্য করবে, দাবি কেন্দ্রের।
সাত শহরে রান্নার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস বণ্টনের যে-প্রকল্পে অনুমোদন মিলেছে, তার আওতায় কলকাতা ছাড়া থাকছে বারাণসী, পটনা, রাঁচি, ভুবনেশ্বর, জামশেদপুর, কটকের মতো শহর। যে-সব শহরের উপর দিয়ে জেএইচবিডিপিএল প্রকল্পের পাইপলাইন যাবে, সেগুলির মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হবে সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্পের আওতায় থাকা শহর। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সহায়তায় এই প্রকল্প গড়বে গেইল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গোরক্ষপুর, বারাউনি ও সিন্ধ্রির সার কারখানাগুলি চাঙ্গা করার ব্যাপারেও সায় দিয়েছে। জেএইচবিডিপিএল প্রকল্পে যে-পথে এগোবে, সবগুলি সেখানেই অবস্থিত। ফলে হাল ফেরার পরে এই সব কারখানা পাইপলাইনে আসা গ্যাসের অন্যতম ক্রেতা হবে বলে দাবি কেন্দ্রের। সে ক্ষেত্রে কম দামে তাদের গ্যাসও জোগানো হবে।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ বান্ধব হলেও ভারতে জ্বালানির মোট চাহিদার মাত্র ৬.৫% জোগায় প্রাকৃতিক গ্যাস। বিশ্বের গড় চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। তিন বছরে এই চাহিদা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য কেন্দ্রের।