প্রতীকী ছবি।
পণ্য ও পরিষেবা করের (জিএসটি) কাঠামোর ‘ফাঁকফোকর’ নিয়ে অনেক আগে থেকেই মুখ খুলে আসছে বিরোধী দলগুলি। এই নিয়ে যে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে, স্পষ্ট হয়েছে তা-ও। জিএসটি ব্যবস্থার প্রতিবাদে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ব্যবসা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি)। সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খণ্ডেলওয়ালের দাবি, সে দিন প্রায় ৪০,০০০ ব্যবসায়ী সংগঠন ধর্মঘটে যোগ দেবে। ধর্মঘট সফল করার জন্য প্রচার হবে দেশ জুড়ে। এর জন্য প্রতিটি রাজ্যে যাবেন সংগঠনের নেতারা। প্রচার চালানো হবে ক্রেতাদের মধ্যেও। বোঝানো হবে তাঁদের কাঁধে কী ভাবে ‘বাড়তি’ করের বোঝা চাপছে।
২০১৭ সালের ১ জুলাই জিএসটি চালু হয়। বিভিন্ন বিরোধী নেতার পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও তখন অভিযোগ করেছিলেন, পুরোপুরি প্রস্তুতি না-নিয়েই জিএসটি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে কেন্দ্র। এর ফলে সমস্যা হবে সরকারি ও ব্যবসায়ী, উভয় পক্ষের। এ বার কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-র ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সংগঠন সিএআইটি-ও আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়ায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেল বলে বক্তব্য ব্যবসায়ী মহলের। সিএআইটি-র দাবিকে সমর্থন জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনও।
জিএসটি-র বিভিন্ন ত্রুটির উল্লেখ করে তাকে ‘ঔপনিবেশিক আইন’ আখ্যা দিয়েছেন খণ্ডেলওয়াল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুরুতে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নতুন পরোক্ষ কর ব্যবস্থার কাঠামোটি সরল হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক তার উল্টো। রয়েছে পরস্পরবিরোধী ব্যবস্থা। বহু ক্ষেত্রে একই পণ্যের উপরে একাধিক হারে কর বসানো রয়েছে। যেমন, খাদ্যপণ্য ব্র্যান্ডেড হলে এক রকম হারে কর, আর ব্র্যান্ডেড না-হলে অন্য হারে।’’
প্রস্তাবিত ধর্মঘটে যোগ না-দিলেও জিএসটি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি সুশীল পোদ্দারের অভিযোগ, জিএসটিতে হিসেব দাখিল করে কর মেটানোর প্রক্রিয়াটি শুধু জটিল নয়, অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষও। ভ্যাট ব্যবস্থায় কর মেটাতে যে খরচ হত তার কয়েক গুণ বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে জিএসটিতে। এর ফলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। পুরোপুরি প্রস্তুত না-হয়েই যে জিএসটি চালু করা হয়েছে সেই অভিযোগ সমর্থন করে সুশীলবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রায় চার বছর আগে চালু হওয়ার পর থেকে করের হার কিংবা জিএসটি আইন এখনও পর্যন্ত এক হাজার বার সংশোধন করা হয়েছে। সমস্যা হল, বহু জিএসটি অফিসারই ওই সমস্ত সংশোধনের বিষয়ে অবগত নন। ফলে অনেক সময়েই হেনস্থা হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।’’
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির আরও অভিযোগ, চালু কর ব্যবস্থায় এক ব্যবসায়ীর গাফিলতির ফল অন্য ব্যবসায়ীকে ভুগতে হচ্ছে। সুশীলবাবু বলেন, ‘‘আমি যাঁর কাছ থেকে পণ্য কিনেছি, তিনি যদি রিটার্ন দাখিল না-করেন, তা হলে আমিও আগে মেটানো কর ফেরতের (ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট) সুবিধা পাব না।’’