—ফাইল চিত্র
করোনাকালে তালা ঝুলেছে বহু কারখানা-সংস্থা-প্রতিষ্ঠানে। লকডাউনের কাজ হারিয়েছেন বহু শ্রমিক। দূরত্ব অগম্য জেনেও অনেক পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ির পথে পা বাড়িয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থনীতিতে গতি আনতে কাজ হারানো শ্রমিকদের কাজের বন্দোবস্ত করতে বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দিশা দেখাবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাশাপূরণ হল কই!
বাজেট বক্তৃতায় শ্রমিক এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অনেক আশার কথা শুনিয়েছেন নির্মলা। শ্রমিকদের জন্য ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রকল্প’ চালুর কথা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের ফলে ৬৯ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। কর্মসূত্রে পরিবার থেকে দূরে থাকা ব্যক্তিরা ভারতের যে কোনও জায়গা থেকে রেশন সংগ্রহ করতে পারবেন।’’ গিগ, নির্মাণকর্মীর মতো পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য পোর্টাল তৈরি প্রস্তাব রয়েছে এ বারের বাজেটে। গিগ ও প্ল্যাটফর্মকর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদী সরকার আগেই ১১০ লক্ষ কোটি টাকা পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছিল। এ বার বাজেটে সড়ক ও কয়েকটি রাজ্যে মেট্রো প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে বড় কর্মসংস্থান হবে বলে আশা সরকারের। এ ছাড়াও ২০২৪-এর মধ্যে জাহাজ পুনর্নিমাণের পরিধি বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী। আশা প্রকাশ করেছেন, সেখানেও দেড় লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রশ্ন, অর্থনীতির যে হাল, তাতে ক’টি বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসবে?
বিরোধীরা অবশ্য নির্মলার কর্মসংস্থান তৈরি সুযোগকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, অর্থমন্ত্রী ঘটা করে শ্রমিক ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সামাজিক কল্যাণের বলেছেন ঠিকই, কিন্তু আগামী দিনে কর্মসংস্থানের সুযোগ কোথায়? শ্রমিকদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য কোনও পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি বাজেট বক্তৃতায়। স্বভাবতই কাজ হারানো মানুষগুলির জন্য কোনও দিশা নেই। বিরোধীরা বলেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা আশা করেছিলেন, তাঁদের যন্ত্রণার সুরাহার জন্য অর্থমন্ত্রী কোনও প্রকল্প ঘোষণা করবেন। কিন্তু নির্মলা তাঁদের হতাশই করেছেন।
কী বলছেন রাজ্যের পরিযায়ীরা?
মেদিনীপুর থেকে কোচবিহার, চব্বিশ পরগনা থেকে মুর্শিদাবাদ, রাজ্যের সব জায়গা থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান। তেমন অনেক পরিযায়ীই এ দিনের বাজেটে নিজেদের জন্য কোনও আশা দেখতে পাচ্ছেন না। যেমন দেগঙ্গার বাসিন্দা সামাদ শেখ। তিনি কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এখন বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘এর থেকে আমাদের জন্য সরকার যদি সহজ শর্তে সামান্য ঋণের ব্যবস্থা করত, তা হলে ছোটখাটো ব্যবসা করতে পারতাম।’’ করোনার সময়ে কাজ হারানো দাসপুরের সুজয় কাপাস বলেন, ‘‘মালিক ডাকেনি। বাড়িতেই আছি।’’ তবে রেশন কার্ডে কর্মস্থলে রেশন সামগ্রী পেলে অনেকেই উপকৃত হবে বলে জানান তিনি। চাকদহের বলরামপুর এলাকার পিকু দাস চেন্নাইয়ে ছুতোরের কাজ করেন। তিনি আবার বলেন, “মনে হয় না এ সব কিছু হবে। আগেও অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিছু হয়নি।’’