—ফাইল চিত্র
কথা ছিল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যখন লোকসভায় বাজেট পড়বেন, দিল্লি সীমানা থেকে কৃষকরা পদযাত্রা করে সংসদে যাবেন। লালকেল্লা কাণ্ডের অভিঘাতে কৃষক নেতারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু আজ সংসদের ভিতরে ও বাইরে দু’রকম ভাবে কৃষক আন্দোলন মোকাবিলার চেষ্টা করতে দেখা গেল মোদী সরকারকে। কৃষি ও কৃষক নিয়ে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলির বিস্তারিত উল্লেখ থাকলেও, নির্মলার বাজেটে বহু বিজ্ঞাপিত পিএম কিসান এবং একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই হয়েছে। কৃষি পরিকাঠামো তৈরির জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। কিন্তু সেই তহবিল গড়তে পেট্রোলে আড়াই টাকা প্রতি লিটার ও ডিজেলে ৪ টাকা প্রতি লিটার সেস চাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধী শিবিরের দাবি, মোদী সরকার ঘুরিয়ে কৃষক আন্দোলনের পাশে থাকা মানুষের উপর চাপ তৈরি করতে চাইল কৃষি ক্ষেত্রেই এই সেস বসিয়ে।
কৃষকদের আন্দোলন যে ভাবে কেন্দ্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাতে পূর্বাভাস ছিলই যে বাজেটের দিন নিজেদের কৃষকবন্ধু হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। সেইসঙ্গে প্রজাতন্ত্র দিবসের স্মৃতি মাথায় রেখে ত্রাসও ছিল। আজ তাই সংসদের বাইরে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা ছয়লাপ ছিল পুলিশ এবং আধাসেনা। গাজ়িপুর তথা উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লি আসার জাতীয় সড়ক বন্ধ করে রাখায় অন্যান্য রুটে প্রবল যানজট হয়। ব্যারিকেড যত্রতত্র। যদি আবার কৃষক ইউনিয়নগুলি সিদ্ধান্ত বদলায়, সে কারণেই এই আগাম সতর্কতা।
সরকারের কৃষক দরদি মুখ ফুটিয়ে তুলতে বাজেট বক্তৃতায় এ দিন বহু বাড়তি বাক্য ব্যবহার করতে দেখা গেল নির্মলাকে। বিস্তারিত ভাবে তিনি জানালেন, ২০-২১-এর বাজেটে ফসল কেনার জন্য ৭৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ায় কী ভাবে চাষিরা উপকৃত হন। আগামী বছরের মধ্যে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় তুলে এনেছেন পিএম ফসল বিমা যোজনা, পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা, কুসুম, কৃষি সেচ যোজনার মতো ঘোষিত প্রকল্পগুলির কথা
রাজনীতির লোকজনের মতে, বিক্ষুব্ধ কৃষকদের বার্তা দেওয়াটা ছিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্য। নির্মলা বলেছেন, “ভারত সরকারের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) ফসল কেনার পরিমাণ গত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে বেড়েছে। যেমন গম। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ভারত সরকার এমএসপি-তে গম কিনত ৩৩ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ৬২ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয় ৭৫ হাজার ৬০ কোটি টাকা। একই ভাবে ধানের ক্ষেত্রে ফসল কেনার পরিমাণ বেড়ে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশে ১.৫৪ কোটি কৃষক ধান চাষ করেন। যা আগের থেকে অনেক বেশি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার কৃষকদের জন্য আগে কী কী করেছে, আজকের বাজেটে তা এত বিস্তারিত ভাবে বলার কোনও প্রয়োজন ছিল না। বরং এ বারে পিএম কিসান খাতে গত বছরের তুলনায় খরচ ছাঁটাই করেছে কেন্দ্র। গত বছর বরাদ্দ ছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এ বারে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গত বারের ৭৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও খরচ ছাঁটাই করে এই খাতে ব্যয় করা হয়েছিল সেই ৬৫ হাজার কোটি টাকাই। পাশাপাশি একশো দিনের কাজ প্রকল্পেও বরাদ্দ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছর বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, এ বারে তা কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটের পরে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, “এ বারের বাজেট কৃষকের আয় বাড়ানোর দিকে লক্ষ্য রেখে করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। কৃষকরা এ বার সহজেই ঋণ পাবেন। কৃষি পরিকাঠামো তহবিলের মাধ্যমে মন্ডীগুলি শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” অন্য দিকে সংসদের দুই কক্ষে বাজেট পেশ করার পর সাংবাদিক সম্মেলনে নির্মলা বলেছেন, “সরকার সব সময়ই কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। কৃষিমন্ত্রী আইনের ধারা ধরে ধরে আলোচনার জন্য তৈরি। আমরা বিশ্বাস করি আলোচনার পথেই আগামী দিনে সমাধান সম্ভব।” তাঁর কথায়, “কৃষক নেতাদের অভিযোগ, সরকার নিয়ন্ত্রিত মন্ডী তুলে দেওয়া হবে। বিষয়টি আদৌ ঠিক নয়। বরং যে ১ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে কৃষি পরিকাঠামো তহবিল তৈরি করা হচ্ছে তাতে মন্ডীর উন্নয়ন হবে।”
অধিবেশনে প্রতিবাদ
কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সোমবার বাজেট অধিবেশনের সময়ে কালো পোশাক পরে লোকসভায় উপস্থিত হলেন পঞ্জাবের তিন কংগ্রেস সাংসদ গুরজিত সিংহ আউজলা, জসবীর সিংহ গিল ও রভণীত সিংহ বিট্টু। তাঁরা এর আগে যন্তর মন্তরের সামনে ধর্নাতেও বসেছিলেন।