প্রতীকী ছবি।
শেয়ার বাজারের স্বপ্নের দৌড় যেন থামার নয়। নজিরবিহীন গতিতে উঠছে সে। শুধু অগস্টেই বহু লগ্নিকারীর লাভের ঝুলি অবিশ্বাস্য রকমের ভরেছে সেনসেক্সের প্রায় ৫০০০ পয়েন্ট উত্থানে। ৫৩ হাজার পেরিয়ে সূচকটি ৫৪ হাজারের ঘরে ঢুকেছিল ৪ অগস্ট। তার পরে ওই মাসেই পেরিয়েছে ৫৫, ৫৬ এবং ৫৭ হাজার। গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রথম বার পেরোয় ৫৮ হাজারও। এতে লগ্নিকারীরা খুশি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকেই চিন্তিত। কারণ, এমন উত্থানের যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার মতো কারণ চোখে পড়ছে না, যা রাতারাতি ভোল বদলে চাঙ্গা করবে অর্থনীতিকে। উল্টে অগস্টে দেশে বেকারত্ব বাড়ায় মাথা তুলছে প্রশ্ন।
সূচক যদিও দ্রুত ভোল বদলের আশায় বুকে বেঁধেই ছুটছে। কিন্তু এত দ্রুত এতটা ওঠার পরে তার জমি পোক্ত রাখতে অবিলম্বে সংশোধন জরুরি। যাতে কিছুটা নেমে স্থিতিশীল হতে পারে। গত ক’দিন বাজার এত তেতে ওঠার মূল কারণগুলি হল—
আমেরিকা বাজার থেকে বন্ড কেনা কমানোর (ত্রাণ হিসেবে নগদ জোগানে রাশ টানার) ব্যাপারে ধীরে চলবে, সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভের আভাস। ফলে এখনই বাজারে পুঁজির জোগান কমার আশঙ্কা কম।
* দেশে টাকার যথেষ্ট জোগান। মিউচুয়াল ফান্ড মারফত মোটা অর্থ ঢুকছে বাজারে। পুঁজি ঢালছে বিদেশি আর্থিক লগ্নিকারী সংস্থাগুলিও।
* এপ্রিল-জুনে ২০.১% জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি। অগস্টে ৪৫.১৭% রফতানি বৃদ্ধি। পরিষেবা শিল্পের সঙ্কোচন থেকে বৃদ্ধিতে ফেরার ইঙ্গিত।
* জুলাইয়ে বর্ষার ঘাটতির অনেকটাই অগস্টে পুষিয়ে যাওয়া।
* অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে কেন্দ্রের বার্তা। সেই লক্ষ্য পূরণে লগ্নিকারীর প্র্যতাশা।
এখন প্রশ্ন হল—
* আজ বাদে কাল আমেরিকার
ত্রাণ কমবেই। তত দিনে দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত না-হলে চাপ সামলাতে পারবে?
* জাতীয় উৎপাদন বা রফতানি, গত বছর তলিয়ে যাওয়া হিসেবের নিরিখে এ বছরের উঁচু বৃদ্ধির ছবি কতটা বাস্তব?
* পরিষেবায় প্রাণ ফিরছে হয়তো। কাজ-কারবার খুলেছে। কিন্তু এ সবের ছাপ কাজের হিসেবে নেই কেন? উল্টে বেকারত্ব বেড়েছে। কল-কারখানার উৎপাদনও ঢিমে থাকার ইঙ্গিত।
তেতে আছে বাজারে নতুন শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলার (নতুন ইসু/আইপিও) মরসুমও। তেজি সূচকের টানে একের পর এক সংস্থা আইপিও-র পথে। হিড়িক পড়েছে নতুন ফান্ড প্রকল্পেরও (এনএফও)। বিপুল লগ্নি টানছে সেই সব শেয়ার, ফান্ড। সেপ্টেম্বরে প্রায় ১০টি সংস্থার আইপিও আসার কথা। অন্যতম, রুচি সয়া (৪৫০০ কোটি টাকা), আদিত্য বিড়লা সানলাইফ এএমসি (৩০০০ কোটি টাকা)। অর্থবর্ষের শেষ দিকে আসতে পারে এলআইসি-র আইপিও।
গত সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ বদল এসেছে পেনশন প্রকল্প এনপিএসে। এতে যোগ দেওয়ার সর্বোচ্চ বয়স ৬৫ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০। শিথিল হয়েছে টাকা তোলার শর্তও। মেয়াদ শেষে কোনও গ্রাহকের তহবিলে ৫ লক্ষ টাকার কম জমা থাকলে কোনও অ্যানুইটি (যেখানে ফান্ডের টাকা খাটিয়ে স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করা হয়) না-কিনে তিনি পুরোটাই ফেরত পেতে পারবেন। মেয়াদ শেষের আগে তুললে নগদে মিলবে সর্বাধিক ২.৫ লক্ষ টাকা।
প্রকল্পের মেয়াদ ছিল গ্রাহকের ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত। তা-ও বেড়ে হয়েছে ৭৫ বছর। এনপিএসে এই পরিবর্তনে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি যে প্রবীণেরা সর্বাধিক কর (৩০%) দেন, তাঁরা উপকৃত হতে পারেন। ৮০ সিসিডি (১ বি) ধারা অনুযায়ী, এনপিএসে বছরে অতিরিক্ত ৫০,০০০ টাকা জমিয়ে এঁরা ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর বাঁচাতে পারেন। করের সুবিধা আছে টাকা তোলার সময়েও। নতুন নিয়মে বয়স্করা চাইলে এনপিএস তহবিলের আগের থেকে বেশি টাকা (৫০% পর্যন্ত) শেয়ারে লগ্নি করতে পারেন। বাজার তেজি থাকায় গত এক বছরে এই প্রকল্পে শেয়ার ভিত্তিক প্ল্যানের ন্যাভ বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি।
(মতামত ব্যক্তিগত)