Biometric Data For LPG Subsidy

ভর্তুকিযোগ্য গ্যাসে এ বার থেকে যাচাই করতে হবে বায়োমেট্রিক, মোদীর সিদ্ধান্তে উঠছে বহু প্রশ্ন

সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, মোদী সরকার স্বচ্ছ প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও স্বচ্ছ জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির বড়াই করলেও রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি নিয়ে বরং তাদের বিরুদ্ধে বরাবর স্বচ্ছতার অভাবেরই অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:১১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

উজ্জ্বলা যোজনা-সহ ভর্তুকিযোগ্য রান্নার গ্যাসের (এলপিজি) সব গ্রাহকেরই আধার যাচাই করতে তাঁদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট তেল সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিল মোদী সরকার। যা ঘিরে গ্রাহক এবং বিক্রেতা (ডিস্ট্রিবিউটর), দুই মহলেই ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। বাড়ছে ক্ষোভ। আচমকা জারি করা এই নির্দেশের যৌক্তিকতা ঘিরেও উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement

কেন্দ্র শুধু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য সংগ্রহের কথা বললেও বিক্রেতা মহলের খবর, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই কাজ সারতে বলেছে তেল সংস্থাগুলি। এত কম সময়ে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের তথ্য যাচাই কী ভাবে হবে, তা নিয়ে সব মহলই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কারণ, এই নির্দেশের কথা সরাসরি গ্রাহকদের এখনও জানায়নি সরকার এবং তেল সংস্থাগুলি। হয়নি কোনও প্রচার। আবার ডিস্ট্রিবিউটরদের হাতেও এ জন্য তৈরি হওয়ার সময় প্রায় নেই। বিশেষত প্রবীণ গ্রাহকদের এতে হয়রানি হবে বলে অভিযোগ গ্রাহক মহলে।

সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, মোদী সরকার স্বচ্ছ প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও স্বচ্ছ জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির বড়াই করলেও রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি নিয়ে বরং তাদের বিরুদ্ধে বরাবর স্বচ্ছতার অভাবেরই অভিযোগ ওঠে। বছর আষ্টেক আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে বেশি আয়ের গ্রাহকদের জন্য স্বেচ্ছায় ভর্তুকি ছাড়ার প্রকল্প আনা হয়েছিল। অথচ বছর চারেক আগে উজ্জ্বলা বাদে সাধারণ গ্রাহকদের ভর্তুকি কার্যত চুপিসারে ধাপে ধাপে বন্ধ করে তারা (এখন বটলিং কারখানা থেকে সাধারণ গ্রাহকের বাড়ির দূরত্ব বেশি হলে অল্প কিছু জায়গায় নামমাত্র ভর্তুকি মেলে)। পরে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী ও কেন্দ্রীয় আমলারা দুঃস্থ ছাড়া বাকিদের ভর্তুকি ছাঁটার পক্ষে সওয়াল করেন ও জানান, ২০২০ সালের জুনের পরে সব গ্রাহক ভর্তুকি পান না। শুধু উজ্জ্বলা যোজনার ক্ষেত্রে তা চালু রয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে গত ১৮ অক্টোবর তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের উপ-সচিব কুশাগ্র মিত্তল ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম ও হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়ামের কর্ণধারদের চিঠিতে কেন্দ্রের নির্দেশের কথা জানান। সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উজ্জ্বলা যোজনা-সহ যাঁদের গ্যাসের ভর্তুকি ব্যাঙ্কে জমা পড়ে সেই সমস্ত গ্রাহকেরই বায়োমেট্রিক তথ্যের মাধ্যমে আধার যাচাই করার কথা বলা হয় এবং তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তরফে ইন্ডিয়ান অয়েল-কে সাপ্তাহিক রিপোর্টও দিতে বলা হয়।

সূত্রের খবর, সপ্তাহখানেক আগে সেই নির্দেশ কোনও তেল সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপে বা বার্তা পাঠিয়ে বিক্রেতাদের জানায়। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা সম্পূর্ণ করার কথাও বলা হয়। কিন্তু এ নিয়ে গ্রাহকদের কেন্দ্র বা সংস্থা কিছু জানায়নি। তাঁরা ডিস্ট্রিবিউটর মারফত খবর পাচ্ছেন। আর এখানেই হয়রানির আশঙ্কায় এলপিজি ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার নম্বর এক বার যাচাই করে তা যুক্ত করার পরে ফের বায়োমেট্রিক তথ্য চাওয়ার যৌক্তিকতা কী? বিশেষত বায়োমেট্রিক তথ্য ‘হাতিয়ে’ যখন চারদিকে আর্থিক প্রতারণার ঘটনার অভিযোগ উঠছে, তখন যে ভর্তুকি প্রায় বন্ধই, সেখানে তথ্য যাচাইয়ের এই নির্দেশই বা কেন?

সংশ্লিষ্ট সূত্র অবশ্য বলছে, উজ্জ্বলার আসল গ্রাহকদের চিহ্নিত করা এবং একই পরিবারে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভর্তুকিযোগ্য একাধিক সংযোগ রয়েছে কি না, তা যাচাই করতেই এই পদক্ষেপ। বিক্রেতা সংগঠনগুলির কর্তারা জানাচ্ছেন, দোকানে গিয়ে গ্রাহকেরা বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে পারবেন। আবার সিলিন্ডার দিতে এলে ডেলিভারি বয়-দের কাছেও তা দেওয়া যাবে। এ ছাড়া উজ্জ্বলা যোজনার নতুন সংযোগের জন্য বিশেষ প্রচার গাড়িতেও এই ব্যবস্থা থাকবে।

তবে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের তথ্য কী ভাবে যাচাই করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান ইন্ডেন এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশনের (পশ্চিমবঙ্গ) প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিজনবিহারী বিশ্বাস, অল ইন্ডিয়া ভারত গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশনের (পূর্বাঞ্চল) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুকোমল সেন এবং ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (এইচপি গ্যাস) এলপিজি ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় আগরওয়াল।

তাঁদের বক্তব্য, শহরে অনেক বিক্রেতারই মাথা পিছু গ্রাহক সংখ্যা ৩০,০০০-৩৫,০০০। গ্রামে অন্তত ১০,০০০-১৫,০০০। তেল সংস্থা বা সরকারের তরফে এ নিয়ে সচেতনতা বা প্রচার কর্মসূচিও করা হয়নি। এত কম সময়ে কী ভাবে ওই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা সম্ভব? বরং এতে গ্রাহক-বিক্রেতা, উভয়েরই হয়রানির মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। উপরন্তু সিলিন্ডার জোগান দেওয়ার কর্মীদের এমনিতেই অনেক দায়িত্ব থাকে। সিলিন্ডার ছাড়াও বিভিন্ন সরঞ্জাম তাঁদের বইতে হয়। এর উপরে বায়োমেট্রিক যন্ত্র নেওয়া সব ক্ষেত্রে সম্ভব না-ও হতে পারে। তাঁদের বা দোকানের কর্মীদের সকলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়ও যথেষ্ট নেই। এই পুরো ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্র কেনার খরচ বিক্রেতাদেরই বইতে হবে, যাতে তাঁদের আর্থিক বোঝা বাড়াবে। এ সব বিষয় তুলে ধরে ভারত পেট্রোলিয়ামের এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টরকে চিঠিও দিয়েছে ওই সংস্থার বিক্রেতাদের সংগঠনটি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement