ব্যাঙ্ক এবং অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত এই খুঁটিনাটি নিয়মগুলো জানা আছে?

যে কোনও বিষয়ে নিজের প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার জন্য প্রথমেই অধিকারের জায়গাগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। ব্যাঙ্ক লেনদেনও তার ব্যতিক্রম নয়। লিখছেন প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরীআর্থিক উন্নতির পথে অন্তত এক কদমও এগোতে হলে আগে জানতে হবে ব্যাঙ্কে লেনদেনের ‘অ...আ...ক...খ’। বুঝতে হবে পরিষেবার প্রতিটি পরতে তাঁদের কতটুকু প্রাপ্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৫
Share:

দ্রুত বদলে যাচ্ছে ছবিটা। সমাজের সকলকে আর্থিক উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল করার জন্য প্রত্যন্ত প্রান্তেও ব্যাঙ্ক খোলার নীতি নিয়েছে ভারত সরকার। যার হাত ধরে প্রতি দিন অসংখ্য মানুষ ঢুকে পড়ছেন এই পরিষেবার বৃত্তে। কিন্তু শুধু্ ঢুকে পড়লেই হল না, আর্থিক উন্নতির পথে অন্তত এক কদমও এগোতে হলে আগে জানতে হবে ব্যাঙ্কে লেনদেনের ‘অ...আ...ক...খ’। বুঝতে হবে পরিষেবার প্রতিটি পরতে তাঁদের কতটুকু প্রাপ্য। কোনটা না পেলে অধিকার বুঝে নেওয়ার আইনি লড়াইয়ের পথে যাওয়া যায়।

Advertisement

সবচেয়ে মজার কথা হল, শুধু যাঁরা প্রথম অ্যাকাউন্ট খুলছেন তাঁরা নন, অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কের বহু বিষয় অজানা থেকে যায় দীর্ঘ দিন ধরে পরিষেবা ব্যবহার করলেও। তাই সকলের জন্যই আজ এটারই একেবারে গোড়া থেকে বুঝতে শুরু করব। অন্তত যেগুলির প্রয়োজন পড়তে পারে যে কোনও সময়ে।

Advertisement

অ্যাকাউন্ট কত রকমের

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তিন ধরনের হয়। সেভিংস, কারেন্ট ও বেসিক।

• সেভিংস: সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে নিজের টাকা জমা রাখার জন্য সাধারণত এই অ্যাকাউন্টই খোলেন। যাবতীয় লেনদেন চালানো যায় এখান থেকে। অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম কিছুটা টাকা জমা রাখতে হয়, যা ব্যাঙ্ক নির্বিশেষে আলাদা হতে পারে। মোট জমার উপর মাসে মাসে সুদ পাওয়া যায়। এটিএম বা ব্যাঙ্ক থেকে ইচ্ছে মতো টাকা তোলা যায় যখন-তখন। তবে এটিএম থেকে মাসে নিখরচায় টাকা তোলার সংখ্যা এখন বেঁধে দিয়েছে বেশির ভাগ ব্যাঙ্কই। সেই সীমা পেরোলে লাগে চার্জ। এই সীমাও এক একটি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এক এক রকম। সেভিংস অ্যাকাউন্ট একক নামে (সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট) অথবা দুই বা তার বেশি নামেও (জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট) যৌথ ভাবে খোলা যায়। অ্যাকাউন্টে লেনদেন করার সময় কার সই গ্রাহ্য বলে ধরা হবে, তা অ্যাকাউন্ট খোলার সময়েই গ্রাহককে নির্দিষ্ট নথিতে উল্লেখ করে দিতে হয়।

• কারেন্ট: এই অ্যাকাউন্ট সাধারণত ব্যবসায়িক লেনদেন চালাতে খোলা হয়। তাই মূলত ব্যবসায়ীরাই খোলেন। এটিএম বা ডেবিট কার্ড দেওয়া হয় এতেও। তবে এখানে জমা টাকায় কোনও সুদ পাওয়া যায় না।

• বেসিক সেভিংস ব্যাঙ্ক ডিপোজিট: কোনও ব্যাঙ্কে এই অ্যাকাউন্ট খুললে, সেখানে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক আর সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না। আর কারও যদি আগে থেকেই সেই ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, তা হলে বেসিক সেভিংস ব্যাঙ্ক ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলার পরে ৩০ দিনের মধ্যে তা বন্ধ করে দিতে হয়। এই অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম টাকা জমা রাখার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে গ্রাহক এখানে শুধু টাকা জমা দেওয়া ও তোলার মতো সীমিত কয়েকটি পরিষেবাই মাত্র পান। চেকবুক মেলে না। মাসে এটিএম ও ব্যাঙ্ক মিলিয়ে মাত্র চার বারের বেশি টাকাও তোলা যায় না। তবে যতবার খুশি জমা দেওয়া যায়।

কী করে খুলবেন?

সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাঙ্কে গিয়ে একটি ফর্ম ভরে জমা দিতে হয়। সঙ্গে পরিচয়পত্র হিসেবে প্যান ও আধার কার্ডের কপি লাগে। প্যান না-থাকলে পূরণ করতে হয় ৬০ নম্বর ফর্ম। দিতে হয় পাসপোর্ট সাইজের ছবিও। গ্রাহকের পরিচয় নথিবদ্ধ করার এই প্রক্রিয়াকেই বলে কোওয়াইসি বা ‘নো ইওর কাস্টমার’।

অন্য দিকে, বেসিক সেভিংস ব্যাঙ্ক ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলতে শুধুমাত্র আধার কার্ড দেওয়াই বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া, পরিচয়পত্র হিসেবে দিতে হয় ভোটার কার্ড, ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড, পাসপোর্ট বা প্যান কার্ডের মধ্যে যে কোনও একটি।

নমিনির নাম

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেই নমিনির সুবিধা রয়েছে। ফলে চাইলে সিঙ্গল বা জয়েন্ট, যে কোনও অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ই নমিনি হিসেবে যে কারও নাম নথিভুক্ত করে রাখা যায়। গ্রাহক মারা গেলে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা টাকা সাধারণ ভাবে পাওয়ার অধিকারী হন ওই নমিনিই। চাইলে একাধিক ব্যক্তির নামও দেওয়া যায় তাতে। তবে অন্য কেউ যদি মৃত গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা দাবি করেন, তা হলে সাকসেশন সার্টিফিকেট চাইতে পারে ব্যাঙ্ক। বিশেষ করে স্ত্রী বা সন্তান ছাড়া অন্য কাউকে নমিনি করলে এই সম্ভবনা বেশি থাকে। এক বার নমিনি হিসেবে কারও নাম নথিভুক্ত করা হয়ে গেলেও, পরবর্তীকালে গ্রাহক ইচ্ছা করলে তা বদলাতে পারেন।

নমিনি না-থাকলে?

সাধারণত গ্রাহকের বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান, অবিবাহিতা বোন। গ্রাহক অবিবাহিত হলে আইন মোতাবেক তাঁর সমস্ত উত্তরাধিকারীই ওই টাকা দাবি করতে পারেন। যদি দাবিদারদের মধ্যে কোনও পাওনা-গণ্ডা নিয়ে বিবাদ না থাকে এবং জমা টাকার পরিমাণ সাধারণত ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়, তা হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাকসেশন সার্টিফিকেট চায় না ব্যাঙ্ক। তবে শর্ত হিসেবে জমার ওই অঙ্ক ব্যাঙ্ক বিশেষে আলাদা হতে পারে। সাকসেশন সার্টিফিকেট চাওয়া হবে কী না, তা-ও নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের উপর। তবে দাবিদারদের মধ্যে বিবাদ থাকলে অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশেরও প্রয়োজন হতে পারে।

মৃতের অ্যাকাউন্টের টাকা

অ্যাকাউন্ট যুগ্ম নামে থাকলে যিনি বেঁচে রয়েছেন, তিনি টাকা তুলে নিতে পারেন। একক অ্যাকাউন্টহোল্ডারের ক্ষেত্রে নমিনি টাকা পেয়ে যান। সাধারণত কোনও সাকসেশন সার্টিফিকেট দিতে হয় না। তবে এটা অনেকটাই নির্ভর করে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর। কর্তৃপক্ষ জরুরি মনে করলে সাকসেশন সার্টিফিকেট চাইতে পারেন।

মেয়াদি আমাতের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেও নমিনি শর্ত সাপেক্ষে টাকা তুলে নিতে পারেন। সাকসেশন সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে কী না, সেটা নির্ভর করে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর। সাধারণত সাকসেশন সার্টিফিকেট চায় না ব্যাঙ্ক। তবে নমিনিকে নিজের পরিচয় অবশ্যই প্রমাণ করতে হয়।

ন্যূনতম ব্যালেন্স কী?

সাধারণত সব ব্যাঙ্কেরই সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম কিছু টাকা জমা রাখা বাধ্যতামূলক। এক একটি ব্যাঙ্কে এর অঙ্ক হতে পারে এক এক রকমের। তবে সাধারণ ভাবে তা হয় কমপক্ষে ৫০০ টাকা। স্টেট ব্যাঙ্ক, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাঙ্কে ন্যূনতম টাকা জমা রাখার অঙ্ক অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের থেকে বেশি।

অন্য শাখায় লেনদেন

ব্যাঙ্কের যে শাখায় গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, সেটির পাশাপাশি ওই একই ব্যাঙ্কের অন্য কোনও শাখাতেও তিনি টাকা তুলতে বা জমা দিতে পারেন। তবে একলপ্তে সাধারণত ৫০ হাজারের বেশি তোলা যায় না। টাকা তোলার জন্য গ্রাহককে নিজেকে যেতে হবে ব্যাঙ্কে।

কার্ড হারালে

কোনও ব্যাঙ্কের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড হারিয়ে গেলে অবিলম্বে সেটি ব্লক করতে হয়। সে জন্য ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে বা নিজে গিয়ে তা জানানো বাধ্যতামূলক। থানায় এইআইআর করাও জরুরি। ডুপ্লিকেট কার্ড পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাছে আবেদন করতে হয়। এই কার্ড দিতে কোনও কোনও ব্যাঙ্ক চার্জ নিয়ে থাকে।

পাসবই, চেকবইয়ের নকল

পাসবই বা চেকবই হারালেও চটজলদি জানাতে হবে ব্যাঙ্ক-কে। বিশেষ করে কারও চেকবই খোয়া যাওয়াটা কিছুটা ঝুঁকির। ওই চেক জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য কারও টাকা তুলে নেওয়ার ভয় থেকেই যায়। তাই সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘স্টপ পেমেন্ট’ করার জন্য ব্যাঙ্কে আবেদন জানাতে হয়। আর্জি জানাতে হয় ডুপ্লিকেট পাসবই বা চেকবই পাওয়ারও।

জমা আগে ভাঙালে

ব্যাঙ্কে মেয়াদি আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট করার মানে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমানো। যার উপর মেয়াদ অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে সুদ দেয় ব্যাঙ্ক। ওই হার এক একটা ব্যাঙ্কে এক এক রকমের হয়। সাধারণত মেয়াদ পূরণের পরেই সুদ সমেত আমানতের টাকা হাতে পান গ্রাহক।

তবে প্রয়োজন পড়লে বা চাইলে মেয়াদ পূরণের আগেও টাকাটা তুলে নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে সাদা কাগজে আবেদন করতে হবে। স্থায়ী আমানত সাধারণত যুগ্ম (জয়েন্ট) নামে হলেও যে কোনও এক জন ব্যাঙ্কে এসে টাকা তুলে নিতে পারেন। তবে যদি অ্যাকাউন্ট খোলার সময় বলা থাকে যে, সব সময়েই টাকা তোলার ক্ষেত্রে দু’জনের সই লাগবে, তা হলে মেয়াদপূর্তির আগে এফডি ভাঙাতে ব্যাঙ্কে দু’জনকেই আসতে হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে এফডি সার্টিফিকেটের পিছনে সব সময়েই দু’জনকে সই করতে হয়।

তবে মেয়াদপূর্তির আগে ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা তুলে নিলে জরিমানা হিসেবে ১% হারে সুদ কম পাবেন গ্রাহক।

মেয়াদি জমা থেকে ধার

সাদা কাগজে লিখে মেয়াদি আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ঋণ পাওয়ার আবেদন করতে হবে। পূরণ করতে হবে এর জন্য নির্দিষ্ট একটি ফর্মও। সাধারণত জমা টাকার ৮৫% থেকে ৯০% পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার সুযোগ আছে। ধারের উপর সুদ দিতে হয় গ্রাহককে। সংশ্লিষ্ট মেয়াদি আমানতে তিনি যে সুদ পাচ্ছেন, ধারের উপর তার থেকে ১ থেকে ২ শতাংশ হারে বেশি সুদ গুনতে হবে।

এই ধরনের ঋণ গ্রাহক ইচ্ছা করলে শোধ না-ও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওই আমানতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে যে টাকা জমবে, তার থেকে ঋণের টাকা সুদ সমেত কেটে নেবে ব্যাঙ্ক। তার পরে বাকিটা গ্রাহককে ফেরত দেবে তারা।

পড়ে থাকা অ্যাকাউন্ট চালু

দীর্ঘ দিন ধরে সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে কোনও লেনদেন না হলে তাকে ‘ডরম্যান্ট অ্যাকাউন্ট’ হিসাবে চিহ্নিত করে ব্যাঙ্ক। অ্যাকাউন্ট কত দিন বিনা লেনদেনে পড়ে থাকলে তাকে ডরম্যান্টের তকমা দেওয়া হবে, সেটা ব্যাঙ্ক বিশেষে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ফের চালু করতে হলে আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত করতে হবে। পূরণ করতে হবে কেওয়াইসি প্রক্রিয়া। আবেদন মঞ্জুর হলে, তখনই ওই অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা দিতে হবে বা কিছু টাকা সেখান থেকে তুলতে হবে। তার পরেই অ্যাকাউন্ট ফের চালু হয়ে যাবে।

ওম্বাডসম্যান

ব্যাঙ্কের সঙ্গে গ্রাহকের কোনও ব্যাপারে বিরোধ বাধলে, তার সুরাহার জন্য গ্রাহক ওম্বাডসম্যানের দফতরে আবেদন করতে পারেন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে অবশ্যই অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। তাঁরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু সেটা যদি না-হয় বা তাঁরা যদি সমস্যা না-মেটাতে পারেন, তখন ওম্বাডসম্যানের দফতরে আবেদন করা যায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক দফতরেই অবস্থিত ব্যাঙ্কিং ওম্বাডসম্যানের দফতর। যোগাযোগ করতে হয় সেখানেই।

নোট বদলের নিয়ম

টাকা খুব ময়লা হয়ে গেলে কিংবা ছিঁড়ে গেলে, আমজনতা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ওই পুরনো নোট পরিবর্তন করে নতুন নোট পেতে পারেন। ময়লা নোট বা সামান্য ছেঁড়া (কিন্তু পুরোটাই রয়েছে) নোট সরাসরি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বদল করা যায়।

কিন্তু নোটের কোনও অংশ যদি খোয়া যায়, তা হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘নোট রিফান্ড রুল’-এর সাহায্য নিতে পারেন গ্রাহক। নোট রিফান্ড রুল মোতাবেক তা পাল্টানোর সময় নোটের অবস্থা অনুযায়ী কতটা মূ্ল্য ফেরত পাওয়া যাবে, তা নির্ধারিত হয়। সেই হিসেবে নোটের পুরো মূল্য বা অর্ধেক মূল্য ফেরত পাওয়া যেতে পারে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে আদৌ কোনও মূল্য না-ও ফেরত পেতে পারেন গ্রাহক।

কোন ক্ষেত্রে কতটা মূল্য ফেরত পাওয়া যেতে পারে, তা আগে থেকে জেনে রাখা ভাল—

• যদি নোটের ৬৫% অথবা তার বেশি অংশ অবশিষ্ট থাকে, তা হলে পুরো মূল্যের নতুন নোটই পেয়ে যাবেন গ্রাহক।

• যদি ৪০% থেকে ৬৫ শতাংশের কম অবশিষ্ট থাকে তাহলে অর্ধেক মূল্য ফেরত পাবেন।

• ৪০ শতাংশের কম অবশিষ্ট থাকলে কোনও মূল্যই ফেরত পাওয়া যাবে না।

মনে রাখবেন, নোটের যে অংশটা আপনার হাতে রয়েছে, তাতে নম্বর প্যানেল বা সিকিউরিটি চিহ্নগুলি না থাকলেও, নোটের মূল্য ফেরত পেতে কোনও অসুবিধা হয় না।

নালিশ জানাতে

ব্যাঙ্কের কোনও পরিষেবা নিয়ে হয়রানির শিকার হলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য অভিযোগ জানানোর অনেক জায়গা রয়েছে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সেখানে পৌঁছনো তেমন কঠিন কিছুও নয়। জেনে রাখুন—

• প্রথমে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা দফতরে।

• সেখনে সুরাহা না হলে রিজার্ভ ব্যঙ্কের কাছ যেতে পারেন।

• সাধারণ ভাবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের দু’টি বিভাগ গ্রাহকদের অভিযোগ শুনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করে। এক, কাস্টমার এডুকেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন কমিশন। দুই, ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক গ্রিভান্স।

• ওই দুই বিভাগের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানানো যায়।

• পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ফল না-পেলে, ব্যাঙ্কিং অম্বুডসম্যানের দ্বারস্থ হতে পারেন।

• ওম্বুডসম্যানের দফতর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক দফতরে অবস্থিত। গ্রাহক সরাসরি লিখিত ভাবে সেখানে অভিযোগ জানাতে পারেন।

• অভিযোগ জানানো যেতে পারে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত এবং প্রধানমন্ত্রীর গ্রাহক গ্রিভান্স সেলেও।

• কোথাও প্রতিকার না-পেলে গ্রাহক শেষে আদালতে যেতে পারেন

• তবে মনে রাখবেন, সমস্যা যা-ই হোক, সবার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা বিভাগে লিখিত ভাবে নালিশ জানাতেই হবে। না হলে কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা ওম্বাডসম্যান, কেউই অভিযোগ গ্রহণ করবে না।

পাঠকের প্রশ্ন

প্রঃ ছোট ওষুধের দোকানের ই- ভেষজ পোর্টাল কি জিএসটি-র আওতায় নথিভুক্ত করতে হবে? ব্যবসার অঙ্ক ২০ লক্ষ টাকার নীচে।

সুদীপ্ত সেন

হ্যাঁ, জিএসটি-র আওতায় নথিভুক্ত হতে হবে ওই পোর্টালটিকে। কারণ ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য কোনও ছাড় নেই নতুন এই কর ব্যবস্থায়। তবে ওষুধের ছোট দোকানটি যদি ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত না হয় এবং সেটির ব্যবসা বছরে ২০ লক্ষ টাকার নীচে থাকে, তা হলে নথিভুক্ত না-হলেও চলবে।

পরামর্শদাতা: তিমির বরণ চট্টোপাধ্যায়

প্রঃ লিকুইড ফান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

শুভজিৎ কাপরি

লিকুইড ফান্ডের বৈশিষ্ট্য—

• খুব কম মেয়াদের জন্য টাকা জমানোর পক্ষে আদর্শ।

• তহবিল লগ্নি করা হয় স্বল্প মেয়াদের ঋণপত্রে।

• সে ক্ষেত্রে সিকিউরিটির মেয়াদ হতে পারে ৯১ দিন পর্যন্ত। তবে বেশির ভাগ ফান্ড ম্যানেজারই বাজারের ঝুঁকি ও ঝামেলা এড়াতে লিকুইড ফান্ডের মেয়াদ রাখেন ৬০ দিনের মধ্যে।

• চাইলেই খুব কম সময়ের মধ্যে ফান্ড ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়া যায়। যেমন, সকালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন জানালে সেই দিনই টাকা ফেরতের সুযোগ দেয় বেশ কিছু সংস্থা। তার পরে আর্জি জানালে টাকা আসে পরের দিন।

• যেহেতু মেয়াদ হয় খুব কম দিন, তাই সুদের হেরফেরের খুব বেশি প্রভাব এই ফান্ডে পড়ে না। যে কারণে সব ধরনের ফান্ডের মধ্যে এদের ঝুঁকি সবচেয়ে কম। ফলে খুব কম সময়ের (৭ দিন থেকে ২ মাস) জন্য টাকা রাখতে চাইলে, এই ফান্ড আদর্শ।

• বাড়তি টাকা বাড়িতে নগদে বা সেভিংস অ্যাকাউন্টে ফেলে না-রেখে এতে জমানো তুলনায় লাভজনক।

• আবার ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের তুলনায় কিছুটা বেশি রিটার্ন মেলে।

• বাজারের উপর নির্ভরশীল বলে ঝুঁকি থাকেই। রিটার্ন নিয়ে কখনওই গ্যারান্টি দেওয়া যায় না।

ব্যবসায়ীরা টাকা জমার রাখার জন্য লিকুইড ফান্ড ব্যবহার করে থাকেন খুব বেশি। কারণ কারেন্ট অ্যাকাউন্ট জমা থাকা টাকার উপর কোনও সুদ পাওয়া যায় না। আবার তাঁদের এমন জায়গায় টাকা রাখতে হয়, যেখান থেকে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য প্রয়োজন পড়লেই তোলা খুব সহজ হয়। কিছুটা আয় ও সহজে তোলা, লিকুইড ফান্ডে দুই সুবিধাই পান তাঁরা।

• সময়ের আগে ফান্ড ভাঙালে সাধারণত এগ্‌জিট লোড লাগে না।

প্রঃ আমি গত ২০০৬ সাল থেকে এসআইপি মারফত মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করে আসছি। মোট আটটি প্রকল্পে টাকা জমাই এখন। কোনওটায় ২,০০০, কোনওটায় ১,০০০ টাকা করে। ভাল রিটার্নও পাচ্ছি। আমার প্রশ্ন হল—

লগ্নির নিরাপত্তার খাতিরে আমার কি ফান্ডের সংখ্যা আরও কমানো উচিত? কারণ আমার মনে হয় স্মল ক্যাপ ফান্ড খুব বেশি কিনে ফেলেছি।

পার্থ সেন, দুর্গাপুর

আপনার ৮টি এসআইপি-ই যে ভাল রিটার্ন দিচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। তবে আমার মনে হয় একই রকমের অনেকগুলি ফান্ড কিনে ফেলেছেন আপনি। যেটা সঞ্চয় আরও বেশি বাড়ার পথে হয়তো কিছুটা বাধা হয়ে উঠছে। ফলে পোর্টফোলিও একটু মেরামত করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য দেখুন ফান্ডগুলোর মধ্যে কোন দু’টো সব থেকে কম রিটার্ন দিচ্ছে। সেই দু’টো বন্ধ করে দিন। ফান্ডের দুনিয়াতেও এক একটি প্রকল্পে এক এক রকম ভাবে রিটার্ন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সব চেয়ে বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে বিভিন্ন ধরনের ফান্ডে টাকা খাটানোর চেষ্টা করা ভাল।

পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement