বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে (এসইজে়ড বা সেজ) তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রকল্প নির্মাণের উপর আইনি নিষেধাজ্ঞা এখনও উঠল না। অভিযোগ, সাত মাস ধরে এই ১,১০০ একর জমির সেজ-এ চর্ম ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে কতটা জমি দেওয়া হয়েছে, সেই রিপোর্ট আদালতে পেশই করে উঠতে পারেনি রাজ্য। ফলে সরকারি গাফিলতির কারণেই আইনি জট সেখানে ক্রমশ বাড়ছে বলে
দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
২০১৫ সালের এপ্রিলে এই মামলার সূত্রপাত। বানতলার চর্ম ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাড়াতে জমি চেয়ে রাজ্যের কাছে বহুদিন আগেই আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, চর্ম শিল্পকে জমি না দিলেও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে জমি দিচ্ছে রাজ্য। অথচ মূলত চর্ম শিল্পের জন্যই তৈরি হয়েছিল সেজ। এই টানাপড়েনের জেরেই আদালতের দ্বারস্থ হয় তাঁরা। বর্তমানে ১,১০০ একরের এই সেজ-এ ২০২ একর জুড়ে চর্ম শিল্প। ১২০ একর জমিতে তৈরি হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক।
সরকারি সূত্রে খবর, ২০১৫-র এপ্রিলেই আদালত রাজ্য সরকারের থেকে বানতলায় জমির ব্যবহার ও বরাদ্দ (ইউটিলাইজেশন অ্যান্ড অ্যালোকেশন) সংক্রান্ত রিপোর্ট চায়। তা দেয়নি রাজ্য। এর পরে গত সেপ্টেম্বরে রাজ্যের কাছে ফের রিপোর্ট চায় আদালত। কিন্তু তখনও তা না দিতে পারার কারণে বানতলায় তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা।
এমনকী সেই রিপোর্ট এখন পর্যন্ত দিয়ে উঠতে পারেনি রাজ্য। চলতি বছরের পয়লা এপ্রিল এই মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু রিপোর্টের বদলে তারা একটি হলফনামা দেয়। রিপোর্ট জমা না দেওয়ার কারণে আদালত রাজ্যকে কড়া ভর্ৎসনা করে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। বস্তুত, এই রিপোর্ট না দেওয়ার ফলে মামলা আরও দীর্ঘায়িত হল। একই সঙ্গে সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প নির্মাণের উপরে বহাল থাকল নিষেধাজ্ঞাও।
বানতলায় চর্ম শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের টানাপড়েনের মূলে রয়েছে দূষণ। সেজ-এর জন্মলগ্ন থেকেই তাড়া করে ফিরছে দূষণের ভূত। এখানে চর্মশিল্পের পাশেই রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। চর্মনগরীর বেহাল বর্জ্য ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যকে বারবার অভিযোগ জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহল। অন্য দিকে পরিকাঠামোর অভাবের অভিযোগ তুলে রাজ্যের দ্বারস্থ হয়েছে চর্মশিল্পও। কিন্তু দু’ পক্ষেরই ক্ষোভ, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে সমস্যার সমাধান আজও হয়নি।
আর এই উদাসীনতার কারণেই টানাপড়েন বেড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের। দফায় দফায় রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে চর্ম শিল্পের সংগঠন ক্যালকাটা লেদার ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। সম্প্রতি এমনই একটি মামলার জেরে চর্মনগরীর বাইরে যাবতীয় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। তার জেরেই তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে নির্মীয়মান প্রকল্প অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।