প্রতীকী ছবি।
গত বছরের তুলনায় এ বার মে মাসে বহু গুণ বেশি ক্রেতা শো-রুম থেকে গাড়ি কিনেছেন। এমন চমকপ্রদ সরকারি পরিসংখ্যানে খুশি হওয়ার কথা গাড়ি শিল্পের, বিশেষত বিক্রেতা ডিলার সংস্থাগুলির। কিন্তু বাস্তবে বিক্রি নিয়ে তীব্র আশঙ্কায় ভুগছে তারা। কারণ, চার বছরের খতিয়ান তুলে ধরে ডিলারদের সংগঠন ফাডার দাবি, গত দু’বছর এই সময়ে করোনার দুই ঢেউতে ব্যবসা ছিল তলানিতে। ফলে তার সঙ্গে এখনকার বিক্রির তুলনা চলে না। আসল পরিস্থিতি যাচাই করতে হলে ফিরে যেতে হবে কোভিড আসার আগের বছরে। সেই ২০১৯ সালের সঙ্গে হিসাব মেলাতে বসে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ওই বছরের মে মাসের থেকে গত মাসে বেশিরভাগ গাড়ির বিক্রি অনেক কম, সব মিলিয়ে যা প্রায় ১০%। চড়া মূল্যবৃদ্ধি, গাড়ির বিমার প্রিমিয়ামের খরচ বাড়া ইত্যাদি কারণে হাল যে দ্রুত ফিরবে, এমন সম্ভাবনাও নেই বলেই ধারণা তাদের।
করোনায় অনেক ডিলার সংস্থাই ব্যবসা গুটিয়েছে। কাজ হারিয়েছেন বহু কর্মী। টিকে থাকা ছোট সংস্থাগুলির একাংশের আশঙ্কা, লোকসান বহন করা বহু ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
সরকারি পোর্টাল বাহন-এর হিসাব দিয়ে ফাডা সোমবার জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বার মে মাসে দেশে বিপুল গাড়ি বিকিয়েছে শো-রুম থেকে। যাত্রিবাহীগুলির বিক্রি বেড়েছে ২০৪%, দু’চাকা বেড়েছে ১৯৮%, তিন চাকা ৬৯৬%, বাণিজ্যিক ২৭৮% এবং ট্র্যাক্টর ২১৬%। ২০২০-র মে মাসের নিরিখে বৃদ্ধির হার আরও বেশি। কিন্তু ফাডার প্রেসিডেন্ট ভিঙ্কেশ গুলাটি মনে করাচ্ছেন, গত দু’বছর ধরে ওই সময়ে অতিমারির জেরে বিক্রিবাটা কার্যত বন্ধ ছিল। তাই ২০১৯ সালের মে-র সঙ্গে তুলনা করলে বাস্তব পরিস্থিতিটা বোঝা যাবে। তাতেই দেখা গিয়েছে, এপ্রিলের মতো গত মাসেও ব্যবসা বৃদ্ধির পথে ফিরতে পারেনি। শুধু যাত্রী ও ট্র্যাক্টর ছাড়া বাকি সবক’টির চাহিদা কম। চিন্তা বাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট মহলেরএকাংশ বলছে, ২০১৯-এ অর্থনীতির ঝিমুনিতে মার খেয়েছিল বিক্রি। তার চেয়ে এতটা কমা বিক্রিকে স্বাভাবিক করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
তেলের চড়া দর গাড়ি, বিশেষত দু’চাকার বিক্রিতে ধাক্কা দিচ্ছে, ক’মাস ধরেই বলছিল ফাডা। এ দিন ভিঙ্কেশের দাবি, সম্প্রতি উৎপাদন শুল্ক কমায় তেলের দাম একটু কমেছে। আশা, তা গাড়ি ব্যবসার পক্ষে সহায়ক হবে। কিন্তু গাড়িতে তৃতীয় পক্ষের বিমার খরচ বৃদ্ধি আগ্রহে ধাক্কা দিতে পারে।
হালে তথ্য দেখিয়েছে, দু’চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি অনেকখানি বেড়েছে ভারতে। কিন্তু কয়েকটিতে আগুন লাগায় সেগুলির নিরাপত্তা নিয়েও ক্রেতারা সংশয়ী হয়ে পড়েছেন, বলছেন ভিঙ্কেশ। সেই সঙ্গে বিক্রিকে টেনে নামাচ্ছে যন্ত্রাংশ জোগানের সঙ্কট। ঠিক তাই যাত্রী গাড়ির চাহিদা অতিমারির আগের চেয়ে বাড়লেও অস্বস্তিতে শিল্প। গাড়ি বুক করার পরে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চালু হওয়ায় বাণিজ্যিক গাড়ির চাহিদাও কিছুটা বাড়ছে। সব মিলিয়ে ধন্দ বহাল গাড়ি শিল্পে।