মরিয়া: বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের প্রথম দিনে ভাল রকম বিঘ্নিত হয়েছে পরিষেবা। এটিএম-ও খোলা ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। কলকাতা পুরসভার সামনে সেগুলিরই একটিতে দীর্ঘ লাইন। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
গত বাজেটে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং একটি সাধারণ বিমা সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার রাস্তা পরিষ্কার করতে চলতি শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিল পেশ করার কথা কেন্দ্রের। যার বিরোধিতায় দেশ জুড়ে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার ব্যাঙ্কের কর্মী-অফিসারদের ডাকা ধর্মঘটের প্রথম দিনে সারা দেশেই কম-বেশি ব্যাহত হল এটিএম-সহ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা। সব মিলিয়ে ধর্মঘটের জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। যে এটিএম খোলা ছিল, তার সামনে দেখা যায় লম্বা লাইন। আজ, শুক্রবারও ধর্মঘট চলবে।
বাজেট ঘোষণা কার্যকর করতে বাদল অধিবেশনেই সাধারণ বিমা সংস্থা বিক্রির জন্য সংসদে বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্র। শীতকালীন অধিবেশনে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে একই পথে হাঁটতে সংশোধনী বিলকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, এ বারই ব্যাঙ্কিং লজ় অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০২১ আইনে পরিণত করা। এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অফিসার এবং কর্মীরা। এই আন্দোলন পরিচালনা করছে ব্যাঙ্ক শিল্পের ৯টি ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ)।
এ দিন ইউএফবিইউ-এর আহ্বায়ক গৌতম নিয়োগীর দাবি, “ধর্মঘটের জেরে দেশ জুড়েই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ভেঙে পড়েছিল। বন্ধ ছিল সিংহভাগ এটিএমও।’’ ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর এবং অফিসারদের সংগঠন আইবকের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাসের দাবি, “টাকা তোলা বা জমা দেওয়া ছাড়াও চেক ক্লিয়ারিং-সহ শাখাগুলির সমস্ত কাজই বন্ধ ছিল।’’ প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশাপাশি, বেসরকারি, বিদেশি, গ্রামীণ এবং সমবায় ব্যাঙ্কও রয়েছে ধর্মঘটের আওতায়।
সরাসরি ধর্মঘটে শামিল না-হলেও এর সমর্থনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন দফতরের সামনে কর্মীরা বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বলে জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সমীর ঘোষ। আর ব্যাঙ্কের কর্মীদের আন্দোলনের পাশে থেকে বিমা সংস্থার কর্মীরাও ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফেডারেশন অব জেনারেল ইনশিয়োরেন্স এমপ্লয়িজ়ের পূর্বাঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। একই পথে হেঁটে প্রচার চালিয়েছে বিএসএনএল এমপ্লয়িজ় ইউনিয়নও।
ব্যাঙ্কের কর্মীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সকলের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রসারের হাত ধরে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে। এর ফলে উপকার হয় ছোট শিল্প, কৃষি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তার প্রভাব পড়বে মানুষ তথা দেশের উন্নয়নে। রাজেনবাবু ও আইবকের সাধারণ সম্পাদক সৌম্য দত্ত বলেন, ‘‘এই ধর্মঘটের পরেও সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে প্রয়োজনে লাগাতার ধর্মঘটের পথেও যেতে পারি আমরা।’’