অরুণ জেটলি।
বাজেটের আগে ভেলকি দেখালেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। জিএসটি বাবদ আয় কমছে। কমেনি খরচ। তবু লাফিয়ে বাড়ল রাজস্ব আয়! ছিল সাড়ে তেরো। সেটাই হয়ে গেল আঠারোর বেশি!
কী ভাবে? জাদুকরের মুঠোয় আটকে রাখা পয়সায়! আসলে আয়করে বড় অঙ্কের রিফান্ড আটকে রাখছে আয়কর দফতর। আয়কর দফতরকে অর্থ মন্ত্রকের নির্দেশ, আয়কর-ফেরত তথা রিফান্ডের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে আপাতত আটকে রাখুন। তাতেই আয়কর ও কর্পোরেট কর বাবদ আয় এক লাফে ১৮.৭% বেড়ে গিয়েছে। অর্থমন্ত্রী যা নিয়ে বড়াই করতে ছাড়ছেন না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আয়কর ও কোম্পানি কর বাবদ আয়ে আমরা লক্ষ্যমাত্রার থেকে এগিয়ে রয়েছি। বিশেষ করে গত দু’তিন মাসে কর বাবদ আয়ে দারুণ গতি এসেছে।’’
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতো মোদী সরকারের সমালোচকরা বলছেন, বাস্তবে রাজস্ব আয় বেড়েছে মাত্র ১৩.৫%। আয়কর দফতর বড় অঙ্কের রিফান্ড আটকে রাখাতেই রাজস্ব বৃদ্ধি বেশি দেখাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রকের তথ্য, চলতি অর্থ বছরে প্রত্যক্ষ কর থেকে ৯.৮ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য ছিল। অর্থ বছরের শুরু থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আয় হয়েছে ৬.৮৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা গত অর্থ বছরের এই সময়কালের তুলনায় ১৮.৭% বেশি। এটা আটকে রাখা রিফান্ড যোগ করে। তা যোগ না করলে, বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ১৩.৫%। যা থেকে স্পষ্ট, রিফান্ড আটকে রেখেই হিসেবের খাতায় ৫.২% আয় বেশি দেখাচ্ছেন জেটলি। পুরো রিফান্ড মিটিয়ে দিলে বাস্তব আয় ও হিসেবের খাতার আয়ের মধ্যে এতটা ফারাক থাকত না। প্রতি বছরই কিছু রিফান্ড আটকে থাকে। কিন্তু তার জন্য এতখানি তফাত হয় না। আর সেই কারণেই কংগ্রেসের নেতারা প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন।
কেন এই কৌশল? নর্থ ব্লক সূত্রের যুক্তি, রিফান্ড আটকে রাখলে আপাতত সরকারি কোষাগারে বেশি অর্থ থাকবে। ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী। এ বছর রাজকোষ ঘাটতি ৩.২% বেঁধে রাখার লক্ষ্য নিয়েছিলেন জেটলি। এ দিকে জিএসটি থেকে আয় প্রতি মাসে কমছে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে খরচে কাটছাঁটও সম্ভব নয়। উল্টে গ্রাম-গরিব-কৃষকের মন জয় করতে ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পে বেশি টাকা ঢালতে হচ্ছে। ফলে আয়কর ও কর্পোরেট করই ভরসা এখন জেটলির।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, লোকসভা ভোটের আগের শেষ বাজেটে এই কারিকুরি নতুন নয়। ইউপিএ জমানার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও এমন কৌশল নিয়েছিলেন। কখনও রাজ্যের প্রাপ্য আটকে রেখে, কখনও বা খরচ পিছিয়ে দিয়ে, পরের বছরের খাতায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যাতে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকে। এ বার জেটলির জমানায় আয়কর-ফেরতের টাকা আটকে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে।