আত্মপ্রকাশ। অ্যাপলের নয়া আই-ফোন। সঙ্গে অ্যাপল-ওয়াচ ও অ্যাপল-পে। ছবি: এএফপি
জাদুকর চলে যাওয়ার পর এই প্রথম মঞ্চে সে ভাবে জাদু ফেরানোর চেষ্টা করল অ্যাপল!
আই-ফোনের নতুন দুই সংস্করণ (আই ফোন-৬ আর ৬-প্লাস), মোবাইল মারফত টাকা মেটানোর পরিষেবা (অ্যাপল-পে) আর বহু প্রতীক্ষিত স্মার্ট ঘড়ি (অ্যাপল-ওয়াচ) বাজারে আনার কথা একই সঙ্গে ঘোষণা করল তারা।
প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবসের হাত থেকে সংস্থার স্টিয়ারিং বর্তমান সিইও টিম কুকের হাতে যাওয়ার পর এই প্রথম সম্পূর্ণ নতুন কোনও পরিষেবায় (অ্যাপল-পে) পা রাখল অ্যাপল। জোবসের অনুপস্থিতিতে এই প্রথম বাজারে আসছে তাদের কোনও নতুন পণ্যও (অ্যাপল-ওয়াচ)। ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার গভীর রাতে মার্কিন মুলুকের ফ্লিন্ট সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস প্রেক্ষাগৃহে অ্যাপল যেন বার্তা দিতে চাইল, তাদের উদ্ভাবনের নটে গাছটি মুড়োয়নি। বরং জোবস-জাদু সেঁধিয়ে রয়েছে সংস্থার ডিএনএ-তে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে আগাগোড়া যেন পণ্য ডিজাইনে ‘পাগলাটে’ জোবসের সেই অভিনবত্ব ফেরাতে চেয়েছেন মিতবাক, শান্ত-শিষ্ট টিম কুক। তাঁর সংস্থার দাবি, আই ফোন-৬ আর আই ফোন-৬ প্লাসে স্ক্রিনের আকার যেমন আগের তুলনায় বড় (যথাক্রমে ৪.৭ ও ৫.৫ ইঞ্চি) হয়েছে, তেমনই বাড়ছে ব্যাটারি-লাইফ। সঙ্গে যোগ হচ্ছে বেশ কিছু নতুন বৈশিষ্ট্যও। অনেকে বলছেন, সম্প্রতি আই-প্যাডের বিক্রিবাটা তেমন ভাল হচ্ছিল না। দুনিয়াজুড়েই ভাটা চলছে ট্যাবলেটের বাজারে। সেই সমস্যা সামাল দিতেই এই আই ফোন-৬ প্লাস। খানিকটা যেন ফোন আর ট্যাবলেটের যুগলবন্দি।
কিন্তু আই-ফোনের নয়া সংস্করণ নয়, তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া এ দিন তার থেকে অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়েছিল অ্যাপলের আনকোরা পণ্য আর পরিষেবার দিকে। একেবারে চমকে দেওয়ার মতো কিছু আনার কথা সেই ২০১৩ সালের শেষ থেকে বলতে শুরু করেছিলেন কুকও। তার উপর এ দিনের অনুষ্ঠান ফ্লিন্ট সেন্টারে হওয়ার ঘোষণার পর থেকে প্রত্যাশা উঠেছিল তুঙ্গে। কারণ, এখানেই তো সেই ইতিহাস গড়া ল্যাপটপ আই-ম্যাকের উপর থেকে পর্দা তুলেছিলেন জোবস। ফলে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছিল প্রশ্ন, তা হলে এ বারও কি দেখা যাবে তেমনই চমকে দেওয়া কিছু?
সে দিক থেকে দেখলে অবশ্য কুক কথা রেখেছেন। এ দিন তাঁর ঘোষণায় প্রথমে এসেছে অ্যাপল-পে। অ্যাপলের দাবি, তাদের মোবাইলে এই পরিষেবা ব্যবহার করে টাকা মেটালে কার্ড নম্বর অন্য কেউ জানবে না। জানতে পারবে না ঠিকানাও। লেনদেন থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। এবং তার পরও কুক মঞ্চে বলেছেন, “ওয়ান মোর থিং টু কাম...”। আরও একটা জিনিস আসছে।
আর সেটিই অ্যাপল-ওয়াচ। জোবসের চলে যাওয়ার পর প্রথম পণ্য। এমন ঘড়ি, যা হাত ওঠালে তবে দেখা যায়। ইচ্ছেমতো সাজিয়ে নেওয়া যায় তার ডায়াল। হৃদস্পন্দন থেকে শরীর ভাল রাখার দৌড়ঝাঁপ এক কথায় তা মাপতে পারে সবই। তার পাশে থাকা চাবি ঘুরিয়েই প্রায় সব কাজ সেরে ফেলা যায়। যেন হাতে পরে থাকা মিনি কম্পিউটার। গায়ে লেপ্টে থাকা প্রযুক্তি। তবে হ্যাঁ, একা এ ঘড়ি কাজ করে না। সঙ্গে পকেটে আই-ফোন থাকা জরুরি।
জোবস চলে যাওয়ার দিন থেকেই একটা প্রশ্ন তাড়া করে ফিরেছে অ্যাপলকে। তা হল, তাঁর জাদুকরী উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর সম্মোহনী বিপণন না-থাকাকে কী ভাবে সামাল দেবে অ্যাপল? প্রশ্ন উঠেছে, ‘কোহিনূর’ হারানোর ধাক্কা সামলে অ্যাপল কি অ্যাপলই থাকবে? নাকি জোবসের অবর্তমানে নটে গাছটি মুড়োবে বিশ্বের সব থেকে দামি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার? হালফিলে আরও চওড়া হয়েছে এই প্রশ্নচিহ্ন। বিশেষত যখন নিত্যনতুন মোবাইল এনে বাজারের বড় অংশ কব্জা করেছে স্যামসাং কিংবা জনপ্রিয় হয়েছে গুগ্লের অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তি।
আর প্রতিদ্বন্দ্বীরা যত ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছে, ততই বেড়েছে নতুন উদ্ভাবনের দাবি। লোকে বলেছে, আই-ফোনের নয়া সংস্করণ তো জোবসের সাজানো বাগানেই ফুল ফোটানো। শূন্য থেকে শুরু করে পাথর কুঁদে বাগান তৈরির নমুনা কোথায়? তা না-হলে যে অ্যাপলকে আরও ঘামতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামনে।
উদ্ভাবনের সেই চ্যালেঞ্জ ছুড়েই এ দিন অ্যাপল-ওয়াচ আনলেন টিম কুক ও তাঁর সঙ্গীরা। অবশ্য জোবস-জাদু তাতে রইল কি না, তার উত্তর দেবে সময় আর বাজারই।