ভারতে অ্যাপলের নিজস্ব বিপণি খোলায় জট কেটেছে গত সপ্তাহেই। তার মধ্যেই দেশের বৈদ্যুতিন পণ্য শিল্পমহল জানিয়ে দিল, আই ফোনের যন্ত্রাংশ দেশেও তৈরি করা সম্ভব। ঠিক যে আপত্তি তুলে বিপণি খোলার শর্তে ছাড় চেয়েছিল মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি।
নিয়মমাফিক এ দেশে একক ব্র্যান্ডের নিজস্ব বিপণি খুলতে হলে সেখান থেকে বিক্রি হওয়া সব পণ্যের ৩০% যন্ত্রাংশ বাধ্যতামূলক ভাবে স্থানীয় বাজার থেকে কিনতে হবে। প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির এই শর্তেই ছাড় চেয়েছিল অ্যাপল। সংস্থার দাবি ছিল, তারা নিজেদের পণ্যে উঁচুমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যার যন্ত্রাংশ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
এ নিয়ে অর্থমন্ত্রক ও বাণিজ্য মন্ত্রকের টানাপড়েনের পরে, শেষ পর্যন্ত ২০ জুন সংস্কারের যে ঝোড়ো ইনিংস মোদী-সরকার খেলেছে, তাতে ভারতে নিজস্ব বিপণি খোলার (হয়তো গ্যাজেট তৈরিরও) দরজা প্রায় হাট করে খুলে গিয়েছে অ্যাপলের সামনে। কেন্দ্র জানিয়েছে, এক-ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় ওই শর্ত শিথিল করা হবে তিন বছর পর্যন্ত। আর যে সব সংস্থা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে (যেমন অ্যাপল) তারা ওই সুবিধা পাবে আরও পাঁচ বছর। অর্থাৎ, মোট আট বছর ওই নিয়ম শিথিলের সুবিধা পাবে সংস্থাটি।
দেশের শিল্পমহলের অবশ্য দাবি, কেন্দ্র চাইলে তারা অ্যাপলের সঙ্গে চুক্তি করতে রাজি। সে ক্ষেত্রে সংস্থা নিজের চাহিদা জানালে সেই অনুসারে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে তারা। এই শিল্পের সংগঠন ইন্ডিয়া ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এম এন বিদ্যাশঙ্কর বলেন, অ্যাপলের আই ফোন তৈরি করতে ২,০০০ যন্ত্রাংশ লাগে। সেমিকন্ডাক্টরের মতো যন্ত্রাংশ হয়তো এখনই উৎপাদন করা সম্ভব নয়, কিন্তু ব্যাটারি, প্যাকেজিং, পিসিবি-র মতো ২০০ পণ্য দিয়েও কাজ শুরু করা যায়। অ্যাপল আগ্রহ দেখালে আগামী ৩ থেকে ১২ মাসের মধ্যেই সেই কাজ সম্ভব বলে দাবি তাঁর। বিদ্যাশঙ্করের মতে, ভারতে অ্যাপলের পণ্য তৈরি হওয়া দেশের উৎপাদন শিল্পের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ। তারা এক বার এখানে ফোন তৈরি শুরু করলে তা সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলকে অক্সিজেন জোগাবে। বিশ্বে কদর বাড়বে ভারতীয় বৈদ্যুতিন শিল্পের।
পাশাপাশি, অ্যাপল যদি এখান থেকে ৩০% যন্ত্রাংশ কেনার ব্যাপারে কথা দেয়, তা হলে চাহিদা অনুসারে ৩-৪ বছরেই উন্নত প্রযুক্তির সেমিকন্ডাক্টর চিপও ভারতে উৎপাদন করা যাবে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন। ২৯ হাজার কোটি টাকা লগ্নিতে দেশের প্রথম সেমিকন্ডাক্টর চিপ কারখানা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে এই সংস্থা।