সরকারি সহযোগিতা কি দরিদ্রকে আরও বেশি সাহায্য-নির্ভর করে তোলে? নাকি তাঁরা হয়ে ওঠেন কর্মকুশলী? নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও এক বার পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ত্রাণের সুবিধা পেলে দরিদ্র মানুষ আরও বেশি করে তার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। বরং সরকারি এবং বেসরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই দারিদ্রের বৃত্ত থেকে আরও বেশি মানুষকে বার করে আনা সম্ভব।
বন্ধনের ২০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রবিবার এক অনুষ্ঠানে অভিজিৎবাবু জানান, বিশ্বায়নের সুফল ভারত পেয়েছে। তবে একই সঙ্গে হাজির হয়েছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। অতিমারির আক্রমণ যার অন্যতম। আর এর ফলে দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচিও হয়ে গিয়েছে জটিলতর। কারণ, এর ফলে নতুন করে বৈষম্যের মাত্রা বেড়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মুক্ত অর্থনীতির জমানায় প্রবেশ করলেও এবং তার আংশিক সুফল পেলেও নতুন এই সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার কথা ভাবেনি। উদ্যোগী হয়নি মানুষের দক্ষতা বাড়াতে।
এই প্রেক্ষিতে ভারতের উদাহরণ টেনে অভিজিৎবাবু মনে করিয়ে দেন, গত দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও দারিদ্র দূরীকরণের দায় বেসরকারি সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাঁধেই ছেড়ে রেখেছিল কেন্দ্র। এর পরে মনমোহন সিংহের সরকার ক্ষমতায় এসে গ্রামীণ রোজগার প্রকল্প চালু করে। যার সুফল এখন স্পষ্ট।
এই প্রসঙ্গে অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, লকডাউনের সময়ে দরিদ্র মানুষকে সুরাহা দিতে বারবার হাতে নগদ তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। যাঁদের তালিকায় ছিলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং অভিজিৎবাবু নিজে। তাঁদের যুক্তি ছিল, সাধারণ মানুষের কেনাকাটির ক্ষমতা বাড়লে শিল্পের চাহিদাও কম ধাক্কা খাবে। যদিও সেই সময়ে মানুষকে যৎসামান্য সেই সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে অতিমারির জেরে যাঁরা নতুন করে দারিদ্রের বৃত্তে চলে এসেছেন, তাঁদের কত দিনে ফের সেখান থেকে বার করে আনা যাবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্নচিহ্ন।