ঢেউ উঁচু হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। নতুন প্রযুক্তির সুনামি আছড়ে পড়লে শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রায় চোখের নিমেষে উধাও হয়ে যাবে অন্তত ৬৬ লক্ষ কাজ। ক্যাশিয়ার থেকে ড্রাইভার, ওয়েটার থেকে কেরানি— লোপাট হয়ে যাবে এমন অনেক পেশা, যার সঙ্গে সমাজের পরিচিতি দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি এই আশঙ্কার কথাই উঠে এল ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের মঞ্চে।
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আয়োজিত ওই সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, কর্মসংস্থানে বন্ধ্যা বৃদ্ধির ছবি পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র। অর্থাৎ, লগ্নি এবং তার হাত ধরে বৃদ্ধি হয়তো হচ্ছে। কিন্তু নতুন কাজের সুযোগ যে ভাবে তৈরি হওয়ার কথা, তার দেখা নেই। তাঁদের মতে, এর অন্যতম কারণ কাজখেকো যন্ত্র ও প্রযুক্তির প্রকোপ। আশঙ্কা, এর জেরে আগামী দিনে বদলে যাবে কল-কারখানার ছবি। নতুন কাজের সুযোগ তৈরি তো দূর অস্ত্, বরং উল্টে কাজ খোয়াতে হবে অনেককে।
শুধু কল-কারখানাও নয়। যে সব কাজে দক্ষতা তুলনায় কম লাগে কিংবা একই কাজ বারবার করে যেতে হয়, তার প্রায় সবেরই দখল নেবে যন্ত্র এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, অটোমেশন ইত্যাদির দাপটে কঠিন হবে কাজ টিকিয়ে রাখাই।
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নুয়েন সুয়ান ফুকেরই যেমন আশঙ্কা, এশিয়ায় কারখানার যে চিরাচরিত ছবি নতুন প্রযুক্তির আক্রমণে তার উধাও হওয়ার জোগাড়। অনেকেই বলছেন, সিঙ্গাপুর, জাপানের মতো দেশ এই প্রযুক্তিতে হয়তো তুলনায় সহজে হজম করতে পারবে। কিন্তু ভুগতে হবে এই অঞ্চলের আর্থিক ভাবে তুলনায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলিকে।
গায়ে-গতরে খেটে করার অনেক কাজ যন্ত্র আগেই কেড়েছে। এখন মাথার কাজও নিয়ে যাচ্ছে কম্পিউটার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ফু হুইনের মতে, এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আর এক দশক সময় পাবে বিশ্বের এই প্রান্ত। তার মধ্যে হয় নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে নইলে হারিয়ে যেতে হবে কাজের দুনিয়া থেকে।
সম্প্রতি কেন্দ্র বলেছিল, ভারতেও কাজের সুযোগ কমার কারণ নতুন প্রযুক্তি, কম জটিল কাজে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার, ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের নিয়োগ। অর্থাৎ, হ্যানয়ের মঞ্চে উঠে আসা আশঙ্কা হানা দিচ্ছে এ দেশেও।