আলোচনায় চিকিৎসক আদিত্য মন্ত্রী
ব্রেন টিউমার মানেই ক্যানসার নয়। আর ব্রেন ক্যানসার মানেই জীবন শেষ নয়। রোগ নির্ণয় এবং তার পরে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এর নিরাময় সম্ভব। ব্রেন টিউমার বা গ্লাওমায় ব্রেন ক্যানসার ধরা পড়লে কোন পথে কী ভাবে চিকিৎসা এগোবে? তার সুলুক সন্ধান দিলেন কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কনসাল্ট্যান্ট নিউরোসার্জেন চিকিৎসক আদিত্য মন্ত্রী।
বিশেষ এক ধরনের ব্রেন টিউমারকে গ্লাওমা বলা হয়। এই গ্লাওমা বা ব্রেন ক্যানসার মস্তিষ্কের যে কোনও অংশে হতে পারে। ১ থেক ৪, এই টিউমারের বিভিন্ন গ্রেড রয়েছে। একজন নিউরোসার্জেন প্রথমে রোগ নির্ণয় করেন। এর পর এমআরআই করে ওই টিউমারের গ্রেড বোঝা যায়।
চিকিৎসক মন্ত্রী বলেন, “এই টিউমার কতটা বিপজ্জনক, তার আরোগ্য সম্ভাবনা কী হতে পারে, তা তিন-চারটে জিনিসের উপর নির্ভর করে। যেমন, টিউমারটা মস্তিষ্কের কোন জায়গায় আছে, সেটা কোন গ্রেডের টিউমার এবং তা কত তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছে।”
লো গ্রেড টিউমার হলে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব। কী এই নতুন প্রযুক্তি? চিকিৎসক মন্ত্রী বলেন, “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন ব্রেন টিউমারের চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে। নিউরোসার্জারির পরিভাষায় একে ‘নিউরো নেভিগেশন, বা ‘নিউরো মনিটারিং’ কিংবা ‘ইন্ট্রা-অপারেটিভ ইউএসজি’ বা ‘ইন্ট্রা-অপারেটিভ এমআরআই’ বলা হয়। এটা করার উদ্দেশ্য হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই টিউমার মস্তিষ্ক থেকে বার করা।”
একটা ধারণা আছে যে সার্জারি করে টিউমার বার করার মানেই রোগমুক্ত হয়ে যাওয়া। কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ নয়। ব্রেন ক্যানসারের চিকিৎসা সার্জারিতেই শেষ হয়ে যায় না। চিকিৎসক মন্ত্রীর কথায়, “ব্রেন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়, সার্জারি, কেমো-রেডিওথেরাপি এবং রিহ্যাবিলিটেশন— সবটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
নতুন প্রযুক্তি সহকারে ক্যানসার চিকিৎসার গুরুত্ব নিয়েও চিকিৎসক মন্ত্রী আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, নতুন প্রযুক্তির দ্বারা ক্যানসারের বেশিরভাগটাই বার করে আনা যায়। শরীর যত কম পরিমাণে ক্যানসার অবশিষ্ট থাকবে, রেডিওথেরাপির ডোজও ততটাই কাম লাগবে। রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায়, এর ডোজও যত কম শরীরে যায়, ততই ভাল।
ক্যানসার সার্জারির পর রোগী সেরে ওঠার সম্ভাবনা কতটা, কতদিন সে বাঁচবে, তা নিয়েই অনেকেই মনে প্রশ্ন থাকে। চিকিৎসক মন্ত্রী বলেন, “রোগী কতদিন বাঁচবে তা বায়োপসি করার পরেই বোঝা সম্ভব। ইদানিংকালে ইমিউনোহিস্ট্রোকেমিস্ট্রি (immunohistrochemistry) অথবা মলিকিউলার পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এই পরীক্ষাগুলো করার পরেই রোগীর আরোগ্য সম্ভাবনার কথা বলা সম্ভব।”
চিকিৎসক মন্ত্রীর মতে, যত তাড়াতাড়ি, যত বেশি পরিমাণে টিউমার শরীর থেকে বার করে আনা যায়, ততই রোগীর ক্ষেত্রে ভাল। খিঁচুনি, কানে কম শোনা, অনেক দিন ধরে মাথা ধরার মতো ঘটনা ব্রেন ক্যানসারের উপসর্গ। তাই শরীরে এমন কোনও লক্ষণ দেখতে পেলেই তিনি নিউরোসার্জেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এই প্রতিবেদনটি অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের সঙ্গে আনন্দবাজার ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।