ডিসেম্বরেই হবে ভোট।
ঢাকার কল্যাণপুরে সন্ত্রাসী আস্তানায় নিরাপত্তা বাহিনীর হানায় নয় জঙ্গির মৃত্যুর পর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছিল প্রশাসনের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ওরা বড় হামলার ছক কষেছিল। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের রাস্তায় কাঁটা ফেলাই উদ্দেশ্য। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
প্রত্যয়ী হাসিনার ঘোষণা, নির্বাচন যেমন হওয়ার তেমনই হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচন ডিসেম্বরেই। প্রস্তুতিতে যেন কোনও গাফিলতি না থাকে। তাঁর নির্দেশে তোড়জোড় পুরোদমে। জুনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ। চেয়ারম্যানরা উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন। ব্যর্থ হলে জবাবদিহি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোও পার পাবে না। আগে চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হতেন নিজস্ব যোগ্যতায়। কোনও রাজনৈতিক সংস্রব ছিল না। এবার দলীয় প্রতীকে লড়েছেন। ভালমন্দের দায় রাজনৈতিক দলের।
গণতন্ত্রের শিকড় ক্রমশ গ্রামের গভীরে। রাজনীতির মূল স্রোত থেকে আর বিচ্ছিন্ন থাকছে না। ভোটে জিতে সাংসদ হয়ে শুধু সংসদ আলো করে থাকলে চলবে কেন। ঢাকার সঙ্গে গ্রামের সরকারি সংযোগ থাকা দরকার। তাদের দাবি দাওয়া যাতে যথার্থ মর্যাদা পায়। সাংসদরা যা পারেন না ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা সেটাই করবেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের সুখ-দুঃখের শরিক হবেন। গ্রামের মানুষকে যেন অনুন্নয়নের অন্ধকারে মাথা কুটতে না হয়।
পশ্চিমবঙ্গের মতই বাংলাদেশের জেলা পরিষদের গঠন। সরকারি প্রশাসনের সঙ্গে সমান্তরালভাবে দায়িত্ব নেবেন জনপ্রতিনিধিরা। জেলাশাসকের হাতে জেলার ভার তুলে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়া যাবে না। চেয়ারের জোরে কাজ চালায় আমলারা। মাটির খবর আর কতটুকু রাখে। সেই দায় পূরণ করবেন নির্বাচিতরা। মানুষের ইচ্ছেয় তাঁরা থাকবেন, নয়ত যাবেন। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তফাৎ একটু থাকছে। সেখানকার মতো প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক রং নেই বাংলাদেশের জেলা পরিষদে। ইউনিয়ন পরিষদে যেটা হয়েছিল, জেলা পরিষদে সেটা হবে না। পার্থক্য আরও আছে। ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দানের সুযোগ পেয়েছিলেন। জেলা পরিষদে তা হচ্ছে না। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ এর সদস্যরাই শুধু ভোট দেবেন। তার বাইরে কারও ভোটাধিকার নেই। বিষয়টি স্পষ্ট করতে নির্বাচনী আইনে কিছু সংশোধনী আনা হবে। নির্বাচন যাতে বিলম্বিত না হয় সেকারণে কাজটা দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।
আইনের ১৭(১) ধারায় আছে, প্রতিটি জেলার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কমিশনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুরসভার মেয়র, কমিশনার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আর সদস্যদের নিয়ে নির্বাচকমন্ডলী গঠিত হবে। ১৭(৩) ধারায় স্পষ্ট, জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর পূর্ণাঙ্গ পরিষদ গঠন করা হবে। জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান ছাড়াও ১৫ সদস্য নির্বাচিত হবেন। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে পাঁচটি আসন। জেলায় নারীদের গুরুত্ব বাড়ানই লক্ষ্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদ দিয়ে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে আওয়ামি লিগ নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ করা হয় ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তার ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচন করার কথা ছিল। হয়ে ওঠেনি। হাসিনা নির্বাচনের কাজ আর ফেলে রাখতে চায় না। উপজেলা, পুরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষে এবার জেলা পরিষদের পালা। বিপুল নির্বাচনী ব্যয় সঙ্কোচনে ‘নির্বাচকমন্ডলী’র ওপর ভরসা। যাঁরা ভোট দেবেন তাঁরাও জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। অবস্থানের দিক দিয়ে শাসক দল আওয়ামি লিগ সর্বস্তরেই এগিয়ে। সবেতেই দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের। জেলা পরিষদে আওয়ামি লিগের পছন্দের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। নির্বাচিতরা দলীয় তকমা না পেলেও তাঁদের অধিকাংশই আওয়ামি লিগের নিয়ন্ত্রণেই থাকবেন। বাকিদের সামলাবে অন্য দল। দলীয় নজরদারিতেই সুরক্ষিত হবে গণতন্ত্র।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে পাকিস্তান?