Bangladesh News

বাংলাদেশে স্কুল পাঠ্য কাণ্ডে তদন্ত কমিটি, সাসপেন্ড দুই কর্তা

ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে উৎসব করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দেয় বাংলাদেশ সরকার। বই শিক্ষার্থীদের হাতে যাওয়ার পর থেকে প্রচুর ভুলভ্রান্তি ধরা পড়তে শুরু করে। ভুল বানান, ভুল শব্দের ছড়াছড়ি।

Advertisement

অঞ্জন রায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ১৭:০৫
Share:

বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম।

ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে উৎসব করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দেয় বাংলাদেশ সরকার। বই শিক্ষার্থীদের হাতে যাওয়ার পর থেকে প্রচুর ভুলভ্রান্তি ধরা পড়তে শুরু করে। ভুল বানান, ভুল শব্দের ছড়াছড়ি। এ ছাড়াও এত দিন সিলেবাসে ছিল এমন অনেক সামনের সারির লেখকের রচনা বাদ পড়েছে। ঘটনা সামনে আসার পরই প্রবল সমালোচনা শুরু হয়। নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ সরকার। কী করে এমনটা ঘটল, কারা এর পিছনে আছে, তা খুঁজে বার করতে গড়া হয়েছে তদন্ত কমিটি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দুই কর্তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তও করা হয়েছে। পাঠ্য বইয়ে ভুল ত্রুটির কথা স্বীকার করে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার ঢাকার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ভুল ত্রুটির সাথে জড়িতরা রেহাই পাবে না। ভুল হয়েছে। আমরা এর মধ্যেই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত (ওএসডি) করেছি। তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে নেতিবাচক প্রচার না করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

Advertisement

তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’-এর ৬৮ পৃষ্ঠায় কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় শব্দ যেমন উল্টোপাল্টাভাবে ছাপা হয়েছে, তেমনি ভুল শব্দও ছাপা হয়েছে। এক জায়গায় ‘চায়’ কে ‘চাই’ হিসেবে ছাপা হয়েছে। কবিতাটির আদি সংস্করণের প্রথম লাইনটি হলো— ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। এই লাইনকে বদলে লেখা হয়েছে— ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। রয়েছে আরও প্রচুর ভুল। এ ছাড়াও মাঝখান থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে চারটে লাইন। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) দাবি করেছে, কবিতাটির আগের রূপকে বাংলা একাডেমির পরামর্শে পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও বাংলা একাডেমি বলছে, তাদের সাথে এ নিয়ে কেউ যোগাযোগই করেনি। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যিনি এই কবিতা না জানেন তাঁর পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুতের সঙ্গে থাকার কোনও যোগ্যতাই নেই।”

আরও পড়ুন, পড়ার উপযোগী করে লিখতে হবে প্রেসক্রিপশন, নির্দেশ বাংলাদেশের আদালতের

Advertisement

নতুন ইংরেজি বইগুলোর পেছনে ‘...বাই দ্য গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ’ লেখা। এটা গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হওয়ার কথা। তৃতীয় শ্রেণির হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে DO NOT HEART ANYBODY। আঘাত (HURT) বোঝাতে গিয়ে এখানে হৃদয় করে ফেলা হয়েছে।
এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ৭৮ পাতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ লেখায় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি কোথাও ‘মুক্তিযুদ্ধ’ আকারে আবার কোথাও ‘ক’ ও ‘ত’ আলাদা করে লেখা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু’ বানানেও 'ঙ' ও 'গ' আলাদা হয়ে গেছে।

হুমায়ুন আজাদের কবিতা ‘বই’ পাঠক্রম থেকে বাদ পড়েছে। শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বাদ পড়েছে সপ্তম শ্রেণি থেকে। এ ধরণের ১৭টি পরিবর্তন নিয়ে উঠেছে প্রবল সমালোচনার ঢেউ। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই দেওয়ায় তাদের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ভুলভ্রান্তিতে ভরা বই দিলে শিক্ষার্থীরা সেই ভুল সারা জীবন বহন করবে। এই দায়িত্বহীনতা মানা যায় না। তা ছাড়া এখানে আত্মসমর্পণের ভাব আছে।”

বাদ পড়েছে হুমায়ুন আজাদের যে কবিতাটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আনন্দবাজারকে বলেন, “এর ফলে জাতিকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হবে। বিশ্ব জুড়ে ধর্মীয় হানাহানির এই যুগে ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষাক্রম তৈরী করা না গেলে জাতিকে মূল্য দিতে হবে।”

কড়া মনোভাব ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীও। নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো শুদ্ধ করার এখনো সময় আছে। মানুষের ভুলত্রুটি হতেই পারে। তবে কিছু ভুল হওয়া উচিত ছিল না। এই ভুলের জন্য বিচার হওয়া উচিত। যাঁরা ভুল করেছেন, তাঁরা রেহাই পাওয়ার যোগ্য নন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement