বাংলাদেশের মৌলভিবাজারের বড়হাটে জঙ্গি-বিরোধী অভিযান শেষ করেছে পুলিশের বিশেষ দল সোয়াট। অভিযান শুরুর পরে নিজেদের বিস্ফোরণেই এক মহিলা-সহ তিন জন মারা গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাড়িটি থেকে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। এই শহরের নাসিরপুর এলাকায় আর একটি জঙ্গি ডেরাতেও এর আগে পুলিশ অভিযান শুরুর পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৭ থেকে ৮ জন আত্মঘাতী হয়েছিল।
অভিযান শেষ ঘোষণা করে পুলিশের জঙ্গি-বিরোধী শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বড়হাটের অভিযান বেশ জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এই আস্তানায় প্রচুর বিস্ফোরক মজুত থাকার পাশাপাশি বোমা তৈরিতে পারদর্শী এক জঙ্গি রয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছিলাম।’’ এই পুলিশ কর্তা জানান, সিলেটে সোয়াটের সঙ্গে লড়াই চালানো কয়েক জন জঙ্গি বারে বারে এই আস্তানায় আসাতেই তাঁরা নিশ্চিত হন যে এখান থেকেই তারা বিস্ফোরক সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছিল। শুক্রবারই এই ডেরায় ‘অপারেশন ম্যাক্সিমাস’ নামে অভিযান শুরু করেছিল সোয়াট দল। ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হলেও তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে সমানে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে চলে। বৃষ্টি ও অন্ধকার নামার পরে শুক্রবার রাতে অভিযান স্তগিত রাখা হয়। তার পরে শনিবার সকাল সাড়ে ন’টায় আবার অভিযান শুরু হয়। সোয়াট বাহিনী হুড়মুড় করে বাড়িটির চত্বরে ঢুকে পড়া মাত্রই পর পর দু’টি বিস্ফোরণ হয় ভিতরে। বাড়িটি থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। তার পরে আর কোনও গুলি ও গ্রেনেড ছুটে আসেনি। কিন্তু পদে পদে বিস্ফোরক সরিয়ে এগোতে
সময় লাগে পুলিশের। ভিতরে পাওয়া যায় এক মহিলা-সহ তিন জনের ছিন্নভিন্ন দেহ।
জঙ্গি দমন শাখার প্রধান জানিয়েছেন, জঙ্গিদের জীবন্ত ধরার জন্য তাঁরা অনেক সময় নিয়েছেন। কিন্তু তারা নিজেরাই আত্মঘাতী হয়েছে। তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন অভিযানে ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা লোকেদের গতিবিধি থেকেই জঙ্গি-দমন শাখা জানতে পারে, দেশের উত্তরাঞ্চলে সিলেট ও মৌলভিবাজারে বেশ কয়েকটি ঘাঁটি তৈরি করেছে নব্য জেএমবি জঙ্গিরা। এখানে সপরিবার বসবাস করে তারা বিস্ফোরক তৈরি ও সংগঠন গুছনোর কাজ করছে।
জঙ্গি-দমন শাখার এক অফিসার জানিয়েছেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া নির্দিষ্ট তথ্য থেকেই তাঁরা এই ডেরাগুলি চিহ্নিত করে অভিযান চালাচ্ছেন। সহযোগী হিসেবে র্যাব ও সোয়াটকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। সিলেটের অভিযানে সেনা বাহিনীকেও ডাকতে হয়েছিল। ওই সূত্রের দাবি— এই অভিযান একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। সম্পূর্ণ নিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত কোনও জায়গাতেই পুলিশ অভিযান চালায়নি।