রয়টার্স-এর তোলা ছবি।
নিজের দেশ থেকে কোনও রকমে পালাতে পারলেও ঢুকতে পারেননি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। দু’দেশের সীমান্তের মাঝখানে থাকা ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’-এ রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। সেখানেই ছাউনি তৈরি করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। হিসেব বলছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ-মায়ানমারের নো ম্যানস ল্যান্ড-এ আটকে রয়েছেন অন্তত ২৬ হাজার রোহিঙ্গা। কিন্তু তাদের নিয়ে চলছে প্রশাসনের ঢাক-ঢাক-গুড়-গুড়।
বাংলাদেশের বান্দারবন পার্বত্য এলাকার নাইক্ষংছড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খবর মেলায় সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কক্সবাজার জেলার সীমানা পেরোতেই অস্থায়ী পোস্টে আটকে দেয় নাইক্ষংছড়ি থানার পুলিশ। প্রথমে ‘অনুমতি নেই’ বলে আটকানো হলেও পরে ‘আগে জানিয়ে আসা হয়নি’, এবং আরও পরে ‘বিদেশি নাগরিকদের জন্য পররাষ্ট্র দফতরের অনুমতি লাগবে’ বলে জানিয়ে দেয় ডেপুটি কমিশনারের দফতর। কর্তব্যরত পুলিশ এই বলেও ভয় দেখায়, ‘‘জঙ্গিদের হাতে প্রাণ খোয়াবেন নাকি! ফিরে যান।’’
প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত অজস্র শিবিরে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় পেলেও এই ২৬ হাজার কেন ঢুকতে পারছেন না?
আদতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বৌদ্ধরা সংখ্যাগুরু। বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু পাহাড়ি জঙ্গি সংগঠনও এখানে সক্রিয়। মায়ানমারে বৌদ্ধদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরেই দেশ ছাড়তে হয়েছে রোহিঙ্গাদের। প্রশাসনের আশঙ্কা, এখানে রোহিঙ্গাদের শিবির গড়া হলে উত্তেজনা বড়তে পারে। আর এই আশঙ্কার কারণেই এই এলাকায় সীমান্ত পেরোতে দেওয়া হচ্ছে না শরণার্থীদের।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর এক আধিকারিকের কথায়, গত ২৫ অগস্টের পর শুধুমাত্র নাইক্ষংছড়ি পার্বত্য এলাকা ও মায়ানমার করিডরে এসেছে ১০ হাজারের বেশি শরণার্থী। তাঁদের সেখানেই আটকে দেওয়া হয়েছে। কোনাপাড়া, বড়োচোঙখোলা, বড়ইতোলি ও সাপমারাঝিরিতেও নো ম্যান্স ল্যান্ড-এ বহু রোহিঙ্গা পরিবার বসে রয়েছে। বিজিবি-র ওই আধিকারিকের কথায়, আটকে থাকা এই শরণার্থীদের মোট সংখ্যা ২৬ হাজারের উপর। অভিযোগ, বাংলাদেশের অন্য শিবিরগুলিতে যতটা ত্রাণ পৌঁছচ্ছে, নো ম্যান্স ল্যান্ড-এর এই শিবিরগুলিতে তা পৌঁছচ্ছে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির যে কর্মীরা বাংলাদেশের ভেতরের শিবিরগুলিতে ত্রাণ সরবরাহ করছেন, এই শিবিরগুলি নিয়ে তাঁরা চুপ। প্রশ্ন করলে বলছেন, ‘জানি না’। তবে বাংলাদেশ রেড ক্রশ এই শিবিরগুলির জন্য কিছু ত্রাণ পাঠাচ্ছে। বিজিবি ও সেনারা এই শিবিরে সেই ত্রাণ বণ্টন করছে।