ব্যাটে-বলে: সাব্বির ও মিরাজ। ছবি: এএফপি।
টান টান উত্তেজনার টেস্ট ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন যিনি তিনি এই সাব্বির রহমান। প্রথম বাংলাদেশের টেস্ট দলে জায়গা করে নেওয়া। আর আবির্ভাবেই রেকর্ড গড়ে ফেললেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে যখন পর পর উইকেট হারিয়ে সমস্যায় বাংলাদেশ তখনই জ্বলে উঠল তাঁর ব্যাট। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের চতুর্থদিন একা প্রাচীর গড়লেন ইংল্যান্ড বোলারদের সামনে। না হলে হয়তো ম্যাচ শেষ হয়ে যেত একদিন আগেই। যেটা ক্রিজে টিকে থেকে আটকে দিলেন সাব্বির। আর বাংলাদেশের জার্সিতে রেকর্ডও করে ফেললেন নতুন। অভিষেক টেস্টেই নিজের নামের পাশে লিখে নিলেন হাফ সেঞ্চুরি। চতুর্থ দিন চতুর্থ ইনিংসে সাব্বিরের ব্যাট থেকে এল ভরসার ৫৯। বাঁচিয়ে রেখেছিলেন পঞ্চম দিন।কিন্তু পারলেন না। নিজে অপরাজিত থাকলেন ৬৪ রানে। উল্টোদিকে কোনও ব্যাটসম্যান ছিলেন না তাঁকে সাহায্য করার জন্য।
শেষ দিন বাংলাদেশকে জিততে হলে করতে হত ৩৩ রান। হাতে ছিল দু’উইকেট। এমন অবস্থায় ব্যাট করতে নেমেছিলেন সাব্বির রহমান ও তাইজুল ইসলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সাব্বিরকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে দলকে জয়ের মুখ দেখাতে পারলেন না বাকিরা। ২২ রানে হেরে গেল টাইগার বাহিনী। এত লড়েও তীরে এসে তরী ডোবার আফসোস হয়ত যাবে না মুশফিকুরদের।
সাব্বিরের ব্যাটই দলের আশা ভরসা জাগিয়েছিল। কিন্তু তাঁর লড়াইটা এই হারে যেন কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে গেল। তবে তিনি যে জাত ব্যাটসম্যান প্রমাণ করলেন ২৪ বছরের এই ছেলেটি। এর আগে দেশের হয়ে ২৯টি একদিনের ম্যাচ ও ২৬টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। কিন্তু টেস্টে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে এতদিন কেন টেস্ট দলে সুযোগ পাননি রাজশাহীর এই ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মাঠই আসলে প্লেয়ারদের জবাবের মঞ্চ। সুযোগ পেয়েই বুঝিয়ে দিলেন সে কথা।
শুধু সাব্বির নন এই টেস্ট লেখা থাকল আরও একজনের নামেও। খুলনার এই ছেলের দাপট অবশ্য দেখা গেল বল হাতে। এই প্রথম বাংলাদেশের জার্সিতে। সাব্বিরের মতোই। প্রথম ইনিংসে তাঁর বলের দাপটেই ২৯৩ রানের শেষ হয়ে গিয়েছিল কুকদের ইনিংস। তিনি মেহদি হাসান মিরাজ। বল করেছিলেন ৩৯.৫ ওভার। শুরুটা করেছিলেন বেন ডাকেটকে বোল্ড করে প্যাভেলিয়নে পাঠিয়ে। শেষ করলেন স্টুয়ার্ট ব্রডকে মুসফিকুরের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে। মাঝে তাঁর শিকারের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেললেন জো রুট (৪০), গ্যারি বালান্স (১), মইন আলি (৬৮) ও জনি বেইরস্টো (৫২)। ইংল্যান্ডের সব ভরসাতেই আঘাত হানলেন ১৮ বছরের এই অল-রাউন্ডার। সাতটি মেডেন ওভারসহ দিলেন ৮০ রান। তাঁর বোলিং স্টাইল রাইট-আর্ম অফব্রেক। ব্যাটও করেন ডান হাতেই। যদিও দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে সাফল্য আসেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০ ওভার বল করে নেন এক উইকেট।
সাব্বির, মিরাজ ছাপ রেখে যেতে পারলেও ২৪ বছরের কামরুল ইসলাম রাব্বি পারলেন না। দুই ইনিংসেই কোনও রান না করে ফিরলেন প্যাভেলিয়নে। পেলেন মাত্র এক উইকেট। সময়টি তাঁর ছিল না। অন্য কোনও ম্যাচে অন্য কোনও সময় হয়তো জ্বলে উঠবেন তিনিও। তবে এই ম্যাচটি ছিল সাব্বির, মিরাজেরই। একজন শুরু করেছিলেন বল হাতে, শেষ করলেন আর একজন ব্যাট হাতে।
আরও খবর...