ফাইল চিত্র।
সন্ত্রাসের হাতিয়ার ধর্ষণ। আতঙ্ক ছড়াতে পুরুষদের বেঁধে রেখে তাদের চোখের সামনেই মহিলাদের যৌন নির্যাতন। তার শিকার মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ ছেড়ে বাংলাদেশের নানা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া নানা বয়সের রোহিঙ্গা মহিলা, অনেকে এখনও আতঙ্কে বাক্যহারা।
বছর একুশের আনোয়ারা বেগম। কোলে বছর দেড়েকের ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশ বালুখালিতে কালো প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট শিবিরে বসেছিলেন। দিন দশেক আগে মায়ানমাররের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসার আগে সেনাবাহিনীর গণধর্ষণের শিকার তিনি।
শোনালেন গত ১৬ সেপ্টেম্বরের কাহিনি— ‘‘রাত হয়েছিল। ননদ আর বছর দেড়েকের ছেলেকে নিয়ে খেতে বসেছিলাম। আচমকা চেঁচামেচি। ভারী জুতোর শব্দ। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকল সেনাদের দলটি।’’ আনোয়ারা জানাচ্ছেন, থালা উল্টে দিয়ে মেয়েদের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে দিল তারা। চার ননদ-সহ তাঁকেও গলায় ছুরি ঠেকিয়ে শুরু করে ধর্ষণ। প্রথমে এক জন। তার পর অন্তত ১২ জন মিলে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে গণধর্ষণ।
গণধর্ষণের পর বাইরে থেকে ঘরে আগুন দিয়ে চলে যায় সেনাবাহিনী। আগুনের তাপে জ্ঞান ফিরতে হাতড়ে ছেলেকে খুঁজে বেড়ার ফাঁক গলে বেরিয়ে লুকিয়ে থাকেন আনোয়ারা। পরে শরীর টেনে টেনে ১৪ দিন ধরে হেঁটে পৌঁছন বাংলাদেশে। আনোয়ারা বাঁচলেও দুই ননদকে বাঁচাতে পারেননি। গণধর্ষণ আর নির্যাতনে সেখানেই মারা যান তাঁরা। শুধু আনোয়ারা নন, কক্সবাজারের কতুপালং এবং বালুখালি শিবিরে বহু মহিলা আশ্রয় নিয়েছেন— যাঁরা পালিয়ে আসার আগে শিকার হয়েছেন সেনার গণধর্ষণের। অত্যাচারের সেই দাগ দগদগে তাঁদের শরীরে।
একই অভিজ্ঞতা তামি গ্রামের আয়েশা, মহসিনা, রাজুমা বেগমদের। মহসিনাকে গণধর্ষণ করার পরে ফেলে রেখে গেলে পরে তিনি কোনওক্রমে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। এখন কতুপালং-এর এক স্কুলে তাঁর ঠিকানা। সেনারা টেনে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর তরুণী বোনকে। রাস্তায় দেখেছিলেন বোনের নগ্ন মৃতদেহ পড়ে রয়েছে উল্টে। আর রাজুমা! বেঁচে রয়েছেন ঠিকই। অস্থির দৃষ্টি চোখে। সে ভাবেই বলেন ৩০ অগস্ট তুলাতুলির ঘটনা। সেনারা গ্রামে ঢুকে সবাইকে ঘর থেকে বার করে এক জায়গায় জড়ো করে। পুরুষদের সেখানেই গুলি করে মেরে ফেলে। তার পর চার-পাঁচ জন করে মেয়েদের এক একটি ঘরে ঢুকিয়ে সেনারা ধর্ষণ করে। সঙ্গে নির্যাতন। আজুমা বলেন, ‘‘বছর দেড়েকের ছেলেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সে কেঁদে ওঠায় গলা কেটে খুন করে।’’
শরণার্থীদের ফেরত দেওয়ার জন্য মায়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা শুরু করেছে ঢাকা। কিন্তু কিছুতেই আর গ্রামে ফিরতে চান না আনোয়ারা-মহসিনারা। ফেরার কথা শুনলেই আতঙ্কে চিৎকার করে উঠছেন তাঁরা— ‘‘না! ওখানে ফিরবো না আমরা।’’ শুধু শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন রাজুমা। যেন কিছুই বলার নেই তাঁর!