খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
নীরব অভিমানে সরে থাকা নয়। নিঃশব্দ স্বেচ্ছানির্বাসনও নয়। একবারে সামনে বি এন পি। চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উদাত্ত আহ্বান, ধানের শীষে ছাপ দিন। আমাদের জয়ী করুন। এমন সরাসরি আবেদনে দলের কর্মীরা হতবাক। ভোটে এখনই এতটা সরব হলেন কেন খালেদা! নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে টানাপড়েনটা বজায় রাখলেই ভাল হত বলে অনেকের মত। তাতে নাকি শাসক দল আওয়ামি লিগ স্বস্তিতে থাকতে পারত না। প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার স্ট্রাটেজি তৈরিতে ধন্দে পড়ত। বি এন পি-র সহায়ক সরকারের দাবি অবশ্য মাঠে মারা গেল। ‘নিরপেক্ষ’ সরকারকে দিয়ে ভোট করানোর কথা আগেই উঠেছিল। সেটা ধোপে টেকেনি। নির্বাচন কমিশন শক্ত হাতে হাল ধরায় প্রস্তুতি তুঙ্গে। তা সত্ত্বেও ইস্যুটা জিইয়ে রাখতে চেয়েছিল বি এন পি। যাতে আওয়ামি লিগকে কিছুটা কোণঠাসা করা যায়। তারা যে অবাধ নির্বাচনে অভ্যস্ত নয়,সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা।
বি এন পি-র নেতারা দু'ভাগ। একাংশ চাইছে দাবিটা না দাবিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে। স্থায়ী কমিটির সদস্য পরেশ্বর চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, নির্বাচনে তো বি এন পি যাবেই। হঠাৎ চেয়ারপার্সন কেন ভোট চাইলেন বুঝলাম না। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে, ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে রাজনীতিতে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হল। যাতে মানুষ বোঝে বি এন পি নির্বাচন চায়। ভোট ভণ্ডুল করা তাদের লক্ষ্য নয়। সরকারকে এখন খোলা মন নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার যদি মনে করে- বি এন পি নির্বাচনে এসেই গেছে, আর আলোচনার দরকার নেই, তা হলে ভুল করবে। নির্বাচন বর্জন শেষ দিনেও করা যায়।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে সাফল্যের কথা লেখার পরেই খুন তরুণী
খালেদার ঘোষণা, সরকারকে আর একতরফা নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। ২০ দলীয় জোটও ভোটে যাবে। বিস্মিত নেতাদের তিনি জানিয়েছেন, ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরি করতেই ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন। নেতারা এক সুরে কথা বললেই ভাল। নির্বাচন নিয়ে নেতা-কর্মীদের যাতে কোনও দ্বিধা না থাকে সেটাও দেখতে হবে। ভোট নিয়ে দোলাচালে তারা উৎসাহ হারাবে। প্রস্তুতিটাই ঠিক মতো হতে পারবে না। বি এন পি-র সমর্থকরা উৎসাহ হারাবে। ২০১৪-তে তারা ভোট দিতে পারেনি। এবারও ভোট না দিলে হতাশ হবে।
গত বছর ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিল থেকে বি এন পি-র নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়। সেখানেই খালেদা 'ভিশন ২০৩০' রূপকল্প পেশ করেন। ক্ষমতায় গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দল কী কী করবে তার ফিরিস্তি দেওয়া হয়। সেটাই মানুষের সামনে হাজির। তাতে আশ্বস্ত বি এন পি কর্মী নেতারা। সমর্থকরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। এ বার আওয়ামি লিগের মুখোমুখি হওয়ার অস্ত্রে শান দেওয়ার পালা। যাতে ধারের সঙ্গে ভারও বাড়ে, উদ্বেগে সঙ্কুচিত হয় সরকার তার চেষ্টা।