নিহত মারজান (চেক জ্যাকেট) ও সাদ্দাম। — নিজস্ব চিত্র
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে আরও একটি বড় সাফল্য পেল বাংলাদেশ পুলিশ। রাজধানী ঢাকার বেড়িবাঁধ এলাকায় বৃহস্পতিবার শেষ রাতে গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে নব্য জেএমবি-র মাথা নুরুল ইসলাম মারজান এবং উত্তরাঞ্চলের নেতা সাদ্দাম হোসেন। গুলশনে হোলি আর্টিজান বেকারি হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে মারজানকে খুঁজছিল পুলিশ। রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ছিল সাদ্দাম হোসেন।
পুলিশের জঙ্গি-দমন শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঢাকার মহম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি চেকপোস্ট তৈরি করে পুলিশ। সেখানে মোটরবাইক থামানো মাত্র দুই যুবক গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। এর পরে গাড়ি থেকে নেমে তারা পালাতে যায়। পুলিশের পাল্টা গুলিতে তারা ধরাশায়ী হয়। এর পরে পুলিশ ওই দু’জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তার পরে জঙ্গি দমন শাখা তাদের পরিচয় জানতে পারে। পুলিশের এক কর্তা জানান, লম্বা দাড়ি-গোঁফ রেখে ভোল বদলে ফেলায় নিহত মারজানকে শনাক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিকেলে দুই জঙ্গির দেহের ময়নাতদন্ত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, মারজানের সাথে নিহত সাদ্দাম হোসেন নব্য জেএমবি-র আর এক শীর্ষ জঙ্গি নেতা। উত্তরবঙ্গে অনেকগুলি খুনের আসামি সে। জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে সে-ই খুন করেছিল বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ।
গত জুন মাসে বাংলাদেশ জুড়ে পুলিশের জঙ্গি-বিরোধী অভিযানের পরে জুলাইয়ে গুলশনের কূটনৈতিক এলাকার জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানো হয়। ১৭ বিদেশি-সহ ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। সেই অভিযানে ‘অপারেশন কম্যান্ডার’ হিসেবে মারজানের নাম জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তার ছবিও প্রকাশ করা হয়। এর পরে পাবনার হেমায়েতপুরের এক দর্জি দম্পতি পুলিশকে জানান, এটি তাঁদের ২৩ বছরের ছেলে নুরুল ইসলামের ছবি। মাদ্রাসায় পড়া শেষ করে ২০১৪ সালে সে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যালয়ে আরবি নিয়ে পড়তে যায়। সেই পড়া শেষ না-করে নুরুল জঙ্গি দলে নাম লেখায়। তার পর থেকে তার আর খোঁজ নেই। পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পিসতুতো বোন শায়েলা আফরিন প্রিয়তিকে বিয়ে করে মারজান। স্ত্রীকেও জঙ্গি দলে ঢুকিয়েছিল সে। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানে আটক হন প্রিয়তি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের নেতা ছিল নুরুল ইসলাম। এর পরে পুনর্গঠিত জেএমবি-তে যোগ দিয়ে নেতৃত্বে পৌঁছে যায় সে। অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণও নেয়। পুলিশের দাবি, দেশ জুড়ে ধরপাকড়ে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ার পর অস্তিত্ব প্রমাণের তাগিদেই গুলশনে ওই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালানোর প্রস্তাবটি দেয় মারজান। সেই ছিল ‘অপারেশন কম্যান্ডার’। মারজানের যুক্তি ছিল, বহু বিদেশি নাগরিককে এক সঙ্গে খুন করা গেলে গোটা বিশ্বে প্রচার পাবে তারা।