আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন।
কাওরান বাজারের পাইকারি বেচাকেনার ভিড় ঠেলে হোটেলের রিসেপশনে ঢুকেই চমক! নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি এখানে নতুন কিছু নয়, কিন্তু এ বারে যা দেখলাম তা ঢাকায় আগের অভিজ্ঞতার থেকে আলাদা। কাগজপত্র দেখিয়ে চাবি নেওয়ার আগে নানা অ্যাঙ্গেল থেকে তুলে রাখা হল বেশ কয়েকটি ছবি। সরকারের নতুন নির্দেশ!
বাংলাদেশের রাজধানীর বাতাসে বারুদের গন্ধ ছিলই। এ বার তার সঙ্গে মিশছে ভোটের উত্তেজনা। বছরের গোড়াতেই টান টান ভাবটা তাই চোখ এড়াচ্ছে না।
যে উপলক্ষে এ বারের সফর, ঢাকা ‘বাংলা একাডেমি’-র সেই আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস এবং রাজনৈতিক নৈরাজ্যকে হারাতে পারে সাহিত্যই। এ দিনই ঢাকায় পৌঁছনো প্রণব মুখোপাধ্যায় থাকবেন কাল সম্মলনের সমাপনী পর্বে। রবীন্দ্রনাথে, জীবনানন্দে ম-ম করছে একাডেমি চত্বর। কিন্তু দু’দিন আগেই পশ্চিম নাখালপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মেরেকেটে তিনশো গজ দূরে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গি ডেরায় অভিযান চলেছে। তিন জঙ্গি নিহত। র্যাব-এর বক্তব্য, ঢাকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল এদের। যে সব বিস্ফোরক ও অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে, তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে হাসিনা প্রশাসনের। তবে ওয়াকিবহালরা বলছেন— সবে শুরু। ভোট যত ঘনিয়ে আসবে, বাড়বে ছোট বড় জঙ্গি-হানার আশঙ্কাও।
গোটা নগরী আলোয় আলো করে সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে গত পরশু ভোটের ঢাকে কাঠি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। বছর শেষে এই নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিএনপি অংশ নেবে কি না— সে দিকেই এখন নজর সবার। বিএনপি-র দাবি, তারা সর্বান্তকরণে চাইছে ভোটে যোগ দিতে। ২০১৪-র ৫ জানুয়ারির ভোটে যোগ না-দেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে এখন এই দলের অনেকেই মনে করছেন। তাঁদের কথায়, বিএনপি এতে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের অনেকেরই মত— জামাতে ইসলামির সঙ্গে জোট বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় যানবাহনে আগুন দিয়ে ‘জ্বালাও পোড়াও’ আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোয় বিএনপি-র জনপ্রিয়তা কমেছে। আবার এই
মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামি লিগের পক্ষেও জিতে আসা কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা এই শাসক দলের অনেক কট্টর সমর্থকেরও। তাঁদের কথায়, শেখ হাসিনা ঢাকা ও বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন বটে। কিন্তু তা ছাপিয়ে মানুষের কাছে বড় হয়ে উঠছে দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি, উদ্ধত আচরণ এবং দখলদারির মানসিকতা।
গত বারে খালেদার দাবি ছিল, হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে ভোট হলে তাঁরা অংশ নেবেন না। নেনওনি। এ বারেও অবশ্য খালেদা গত বারের রেকর্ডই বাজাচ্ছেন। বলছেন, নির্বাচনের ‘সহায়ক সরকার’ চাই। হাসিনা গদিতে থাকলে ভোটে যাবে না তাঁর দল। কিন্তু খালেদা বিলক্ষণ জানেন, এই দাবি আদায় করার মতো শক্তি বিএনপি-র নেই। আর তাই সুর নরম করে বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল গত কাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিক ভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা ভেবে থাকেন, তা হলে তাঁর উচিত সবার সঙ্গে আলোচনায় উদ্যোগী হওয়া। সঙ্গে সঙ্গে তা উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সংবিধানেই সব বলা আছে। আলোচনার কী আছে? তত্বাবধায়ক সরকারের নামে অনির্বাচিত সরকারের হাতে আর দায়িত্ব ছাড়া হবে না।’’