ছবি: রয়টার্স।
মোমের আলো, ফুলের স্তবকে এখনও ঢেকে আছে গুলশানে জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হলি আরটিজান রেস্তোরাঁর সামনেটা। প্রতিদিনই শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন মানুষ। ভয় ভয় ভাবটা কাটেনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জিতে নেওয়া বাংলাদেশের মানুষ মাথা নোয়াবার নয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে রাজধানী ঢাকা। ছন্দে ফিরছে জীবন। দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড়, খাবারের খোঁজে রেস্তোরাঁয় রেস্তোরাঁয় অসংখ্য মানুষ। ইদের ছুটির পরে সবগুলো ব্যস্ত রাস্তাতেই পরিচিত যানজট। গুলশান- শোলাকিয়ার রক্ত আর লাশগুলো শংকিত করলেও মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। প্রশ্ন করলে একজনের সাফ উত্তর- বাংলাদেশ গ্লোবাল ভিলেজের বাইরে না। বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে যেমন এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী ঘটনার পরেও জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, ঢাকাতেও সেটাই হচ্ছে। পৃথিবীর সাথে সাথে আমরাও চলমান।
গুলশানের রেস্তোরাঁগুলোতেও গত কয়েক দিনের শূন্যতা কাটতে শুরু করেছে- কম হলেও বিদেশি ক্রেতারা আসছেন। বসুন্ধরা শপিং মলে কেউ আসছেন নতুন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট কিনতে, কেউ বা উপরের ফুড কোর্টে খাবারের সন্ধানে। তরুণদের ভীড়ে সরগরম পুরো মল। শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড়। পাঁচতারা হোটেল সোনার গাঁ থেকে ওয়েষ্টিনের বুফে ফাঁকা নয়। তবে রেস্তঁরাগুলোতে আগে যে পরিমাণে বিদেশিদের ভিড় থাকত সেই ভিড় কিছুটা কম। প্রতি বছরের মতো এবারও ইদে বহু মানুষ ছুটি কাটাতে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন। অধিকাংশেই ফিরে এসেছেন। বস্ত্র কারখানাগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে। ছুটি শেষে সরকারি- বেসরকারি অফিসে আগের মতোই ব্যস্ততা।
নিরাপত্তা নিয়ে সাবধানে আছে সরকারও। মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট। দিন কয়েক আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গণমাধ্যমে গিয়ে জানিয়ে এসেছেন তাদের সার্বিক প্রস্তুতির কথা।
বেসসরকারি বিভিন্ন আবাসিক ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিসে সিসি ক্যামেরা বসানো অনেকটাই বেড়েছে গুলশান হামলা ও গত কয়েকটি ধারাবাহিক জঙ্গি হানার পরে। বিভিন্ন মন্দিরেও সিসি ক্যামেরা বসছে। পুরোহিত, যাজক সহ যাঁরা সফট টার্গেট হিসেবে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে এখনও রয়েছে শংকা, নিরাপত্তাহীনতা। অভিভাবকদের মধ্যে বাড়ির বাইরে বেরোনো সন্তানের খোঁজ রাখার প্রবণতা বেডেছে। গত কয়েক মাসে না জানালেও গুলশানের পরে হারিয়ে যাওয়া তরুণ সন্তানের খোঁজে থানায় জিডি করার প্রবণতা বেড়েছে।
গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা আসে, তার একজন লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন কাউসারের পরিবার থানায় জিডি করেছে। তার মা স্কুলশিক্ষক তাহেরা বেগম লক্ষ্মীপুর সদর থানায় গত শনিবার রাতে এই ডায়েরি করার পর দাবি করেছেন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে তাজউদ্দিন যে নিখোঁজ তা তিনি এত দিন জানতেন না। গণমাধ্যমে খবর দেখে তিনি সন্তানের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন। ১ জুলাই গুলশানে হামলাকারী যুবকদের কয়েকজন আগে থেকেই পরিবারের কাছে উধাও হয়ে গিয়েছিল। এ তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর আরও ১০ যুবকের নিখোঁজ থাকার খবর দেন পুলিশ কর্তারা। অবশ্য এখন যে অভিভাবকেরা থানায় জিডি করছেন, তারা অনেকেই গুলশানের জঙ্গি হামলার আগে পর্যন্ত নীরব ছিলেন। যেমন-ইদের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষে নিহত আবীর রহমান বাড়ি ছাড়ে ১ মার্চ, তার পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি হয়েছে শোলাকিয়ার ইদ জামাতে হামলার আগের দিন। অর্থাত্ গুলশান হামলার পরে।
এ সবের পরও থেমে নেই ঢাকার চাকা। প্রতিনিয়তই তা ঘুরছে সুন্দর আগামীর গন্তব্যের দিকে। চলার পথে বাধা যতই আসুক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে দীপ্ত শপথ উচ্চারিত হয়েছিল একাত্তরে, সেই ধারাতেই রয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। আশা সেখানেই।
আরও খবর...