International

ব্লগার অভিজিৎ খুন: ৭টি ভিডিও প্রকাশ করল ঢাকা পুলিশ

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ৬ জনের প্রাথমিক পরিচয় জানিয়ে ৭টি ভিডিও প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ওই সব ভিডিওতে অভিজিতের অনুসরণকারী সন্দেহভাজন খুনিদের শনাক্ত করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Advertisement

অঞ্জন রায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ২০:৫৭
Share:

অভিজিৎ রায়। -ফাইল চিত্র।

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ৬ জনের প্রাথমিক পরিচয় জানিয়ে ৭টি ভিডিও প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ওই সব ভিডিওতে অভিজিতের অনুসরণকারী সন্দেহভাজন খুনিদের শনাক্ত করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Advertisement

রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ডিএমপির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে পর পর ওই সাতটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে সন্দেহভাজন ৬ জনের পরিচয় সঠিক কি না, শহরবাসীকে তা সুনিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে, লেখক অভিজিৎ রায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যায় বইমেলা থেকে বের হচ্ছেন। সন্দেহভাজন যে ৬ জনের পরিচয় সুনিশ্চিত করার অনুরোধ করা হয়েছে শহরবাসীকে, দেখা যাচ্ছে, প্রায় একই সময়ে তারা বইমেলা থেকতে বের হচ্ছে বা তার আগে থেকেই বইমেলায় তারা ঘোরাফেরা করছে। পুলিশের প্রকাশ করা ভিডিওতে সবাইকে লাল বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।

Advertisement

পৃথক সিসিটিভি ফুটেজেও আলাদা ভাবে ওই একই তরুণদের দেখা গিয়েছে। প্রথম ফুটেজে দেখা যায়, অভিজিৎ ও বন্যার পেছনে এক তরুণ মোবাইল টিপতে টিপতে তাদের অনুসরণ করছে। রাত তখন ৮টা ৪৪ মিনিট। পাশে ব্যাগ কাঁধে এক তরুণকে যেতে দেখা গিয়েছে। তা ছাড়াও তার পাশে স্বাস্থ্যবান এক তরুণ ছিল। যার চোখে ছিল চশমা।

দ্বিতীয় ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, অভিজিৎ ও বন্যা বইমেলার গেট দিয়ে বের হয়ে আসছেন। তাদের পেছনে পেছনে ওই তিন জনকেই দেখা যাচ্ছে। সন্দেহভাজন খুনিরা বাইরে বেরিয়ে আসার সময় মোবাইলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছিল।

ভিডিও প্রকাশের পর ডিএমপি জানিয়েছে, ভিডিওতে যাদের দেখানো হয়েছে, তাদের সকলকেই অভিজিৎ খুনের ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্য বা পরিচয় জানা থাকলে ডিএমপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের মেসেজ ইন বক্সে বা হ্যালো সিটি অ্যাপে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অজ্ঞাত খুনির ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ রায়। তার স্ত্রী বন্যাও আততায়ীদের চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান। আমেরিকা প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা।

অভিজিৎ ও বন্যাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান অভিজিৎ। পরে বন্যাকে ঢাকার স্কোয়্যার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লেখালেখির কারণে আগে থেকে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে ছিলেন অভিজিৎ। পুলিশের তদন্তও জঙ্গিদের ধরেই এগোচ্ছে। ওই ঘটনার এক বছর বাদে গত ফেব্রুয়ারিতে কয়েক জনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।

সম্প্রতি 'কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম'-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, “অভিজিৎ হত্যায় ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল এমন তিন জনকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। এর বাইরে ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল, এমন ৬/৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।’’ গোয়েন্দারা অভিজিৎ হত্যায় যাদের শনাক্ত করেছেন, তারা সকলেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য বলে জানিয়েছেন মনিরুল। ধৃতদের মধ্যে ইন্টারনেটে উগ্রবাদের প্রচারক ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবি এবং সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস খুনের আসামি মান্নান ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহির বিরুদ্ধে অভিজিৎ হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ধৃত অন্য ৬ জন ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমান, সাদেক আলি, আমিনুল মল্লিক, জুলহাস বিশ্বাস, আবুল বাশার ও জাফরান হাসানের মধ্যে কেউ সরাসরি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল বলে সন্দেহ পুলিশের।

গত বছর অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর আরও কয়েকজন ব্লগার খুন হন। এরপর অভিজিতের বইয়ের দুই প্রকাশক হামলার শিকার হন। জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সল আরেফিন দীপন মারা যান।

আরও পড়ুন- ২১ অগস্টের রক্তের দাগ এখনও অমলিন

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement