International

মির কাসেমের ফাঁসি যে কোনও সময়, বাংলাদেশের জেলে প্রস্তুতি তুঙ্গে

শুধু সময়ের অপেক্ষা। যে কোনও সময় বাংলাদেশের গাজিপুরে কাশিমপুর জেলে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হবে মির কাসেম আলির। প্রস্তুতি চরম পর্যায়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:২১
Share:

ফাইল চিত্র।

শুধু সময়ের অপেক্ষা। যে কোনও সময় বাংলাদেশের গাজিপুরে কাশিমপুর জেলে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হবে মির কাসেম আলির। প্রস্তুতি চরম পর্যায়ে। ফাঁসির সরকারি হুকুমনামা দুপুরে পৌঁছে যায় জেলে। সন্ধের পরই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, আইজি প্রিজন এবং সিভিল সার্জেন কাশিমপুর জেলে আসেন। ঢুকেছে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। কারাগারের চার দিকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আছে। তৈরি হয়ে আছেন ফাঁসুড়ে শাহীন, রিপন, সাজাহান, দীন ইসলাম। যে কোনও সময়ে ফাঁসি কার্যকর হবে।

Advertisement

আজ সকালের পর থেকেই কাশিমপুর জেলকে ঘিরে সাজো সাজো রব। পুলিশ ছাড়াও জেলের গেটে নিয়োগ হয়েছে প্রচুর সংখ্যায় র‌্যাব জওয়ান। দমকলের একটা গাড়িও বিকেলে পৌঁছে গেছে জেলে। কাল কাত থেকেই জেলে ছিল একটা জলকামানও।

এ সব প্রস্তুতির মধ্যেই আজ বিকেলে জীবিত অবস্থায় মির কাসেমকে শেষ দেখা দেখে গেলেন পরিবার পরিজনেরা। বিকেল সাড়ে ৩টেয় ছ’টা গাড়িতে করে জেলে পৌঁছন ৪৭ জন। তাঁদের মধ‌্যে মির কাসেমের স্ত্রী, কন্য-সহ ৩৮ জনকে ভেতরে গিয়ে দেখা করতে দেওয়া হয়েছে তাঁর সঙ্গে। অতীতে পাঁচ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর সাজা কার্যকর হয়েছিল আত্মীয়স্বজনরা দেখা করে যাওয়ার দিনেই। মির কাসেমের ক্ষেত্রেও সম্ভবত তেমনটাই হতে যাচ্ছে।

Advertisement

মির কাসেম আলির সঙ্গে দেখা করতে এল তাঁর পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

গত মঙ্গলবার ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’ নামে পরিচিত, জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতা, মির কাসেম আলির মৃত্যুদণ্ড খারিজের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ আপিল বিভাগ। এর পর নিজের দোষ কবুল করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগটুকুই ছিল কাসেমের। কিন্তু গতকাল তিনি জানিয়ে দেন প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না। ফলে এই মুহূর্তে তিনি চরম দণ্ডের অপেক্ষায়।

সামান্য এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান জামাতের এই নেতার সম্পদের পরিমাণ কম করে ১২ হাজার কোটি টাকা। ইসলামি ব্যাঙ্ক, ইবনে সিনা, দিগন্ত টেলিভিশন, নয়া দিগন্ত সংবাদপত্র-সহ অন্তত একশো বাণিজ্য সংস্থার মালিক মির কাসেম আলি। যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিচার বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি মার্কিন ল’ফার্মকে তিনি ২৭৫ কোটি টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন।


নিরাপত্তার ঘেরাটোপে জেলে পৌঁছল পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা অঞ্চলের ডালিম হোটেলে মির কাসেম আলির বাহিনী দিনের পর দিন অমানুষিক নির্যাতন করে খুন করেছে অজস্র মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যালঘুকে। এই হোটেলে নির্যাতিতদের সাক্ষ্যই দীর্ঘ সাড়ে চার দশক পরে ফাঁসির দড়ির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল পাক সেনাদের তৈরি আল বদর বাহিনীর কম্যান্ডার মির কাসেম আলিকে।

পাকিস্তান আমলে চন্দ্রমোহন নাথের তৈরি ‘মহামায়া ভবন’টি দখল করে ডালিম হোটেল পত্তন করেছিলেন জামাতের তত্কালীন ছাত্র নেতা মির কাসেম আলি। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পরে এই হোটেলকেই নির্যাতন ও মৃত্যুর কারখানা হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে জানিয়েছেন, হুডখোলা জিপে চড়ে চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়াত কাসেমের সশস্ত্র বাহিনী। তালিকা ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে এনে নগ্ন করে নির্যাতন করা হতো। শেষে তাদের খুন করে দেহ ফেলে দেওয়া হতো জলা-জঙ্গলে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করার ঠিক আগে কাসেম ও তাঁর বাহিনী পালিয়ে গেলে স্থানীয় মানুষ হোটেলটি থেকে বন্দিদের উদ্ধার করেন। চট্টগ্রামে আল শামস ও রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বেও ছিলেন এই কাসেম।


কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে জেল চত্বর। নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে গা-ঢাকা দেওয়া মির কাসেম ১৯৭৭-এ ফের প্রকাশ্যে আসেন সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের বদান্যতায়। সৌদি দূতাবাসে চাকরি শুরুর পরে একের পর এক এনজিও খুলে কোটি কোটি ডলার বিদেশি সাহায্য তিনি কামাতে থাকেন বলে অভিযোগ। ১৯৮৩ সালে এরশাদের আমলে ‘ইসলামি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ’ পত্তন করে শিল্পপতি হয়ে ওঠেন। চিকিৎসা ব্যবসায় নেমে গড়ে তোলেন ইবনে সিনা ট্রাস্ট। গড়ে তোলেন বাংলাদেশের সব চেয়ে আধুনিক ছাপাখানা। একই সঙ্গে জামাতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হন মির কাসেম আলি।

জামাতে ইসলামির বিপুল অর্থের জোগানদার ছিলেন এই নেতা। শুনানি চলার সময়ে দেশের অর্থনীতিতে মির কাসেমের অবদানের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শাস্তি কমানোর আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার বিরোধিতা করেন।

আরও পড়ুন: বাবার ফাঁসিতে দুঃখিত নন মির কাসেমের মেয়ে

এই ডালিম হোটেলই ছিল ‘চট্টগ্রামের জল্লাদের’ মৃত্যুর কারখানা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement