বন্ধু: প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ঢাকায়। নিজস্ব চিত্র
রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকা পৌঁছে প্রণব মুখোপাধ্যায় গত কাল জানিয়েছিলেন, রথ দেখা এবং কলা বেচা— এই হল তাঁর চলতি সফরের উদ্দেশ্য। ‘রথ দেখা’ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা। কিন্তু রবিবার ভারতীয় হাইকমিশনের নৈশাহার অনুষ্ঠানে ‘কলা বেচা’-র অর্থ প্রাঞ্জল করতে চাননি পোড় খাওয়া রাজনীতিক প্রণববাবু!
আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে মধ্যাহ্ন ভোজের পর মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের ট্র্যাক-টু কূটনীতির সূত্রপাত হল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হাসিনার সঙ্গে একান্ত এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে বাংলা একাডেমির মাঠে সাহিত্য উৎসবে বলতে উঠে প্রণব মুখোপাধ্যায় সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “পরিবেশ দূষণের চেয়েও বড় দূষণ মানুষের মন ও চিন্তার দূষণ। মানুষের হিংস্রতার শিকার হচ্ছেন নিরীহ মানুষ। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। ভাষা সংস্কৃতি লুঠ হয়ে যেতে দেননি এ’দেশের মানুষ। এই হিংস্রতার বিরুদ্ধে আজ কবি শিল্পী সাহিত্যিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।”
তাঁর বক্তৃতায় কোনও রাজনৈতিক দল বা মৌলবাদী সংগঠনের নাম করেননি প্রণব। এমনকী শাসক দলের বিরুদ্ধে হেফাজত ইসলামের কট্টরপন্থাকে প্রশ্রয় দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারেও কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু সূত্রের খবর, আজ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে দুজনের। গণভবনে মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে পৌঁছেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। হাসিনা ফুল দিয়ে বরণ করার সময় উপস্থিত ছিলেন বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিক ববিও। মাছের নানা পদ ছাড়া মধ্যাহ্ন ভোজে ছিল হরেক রকমের পিঠেপুলিও।
পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক অর্থনীতি, কৌশলগত পরিস্থিতি নিয়ে মত বিনিময় হয়েছে প্রণব-হাসিনার মধ্যে। রোহিঙ্গা সমস্যা এবং তার সম্ভাব্য সামাধান নিয়ে হাসিনা বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রণবকে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, সে বিষয়ে প্রণব বিশদে জানতে চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। বাংলাদেশ বরাবরই প্রণববাবুর উৎসাহের দেশ। হাসিনা তাঁকে জানান, সরকারের নীতির ফলে তাঁর দেশে দারিদ্রের হার ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে নজর কাড়া উন্নয়ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভোট-তাপের মধ্যেই ঢাকায় সাহিত্য মেলা
রাষ্ট্রপতি পদ ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে প্রণববাবু কী ভাবে এখন অবসর কাটাচ্ছেন, হেসে জানতে চান হাসিনা। প্রণববাবু জানান, বই পড়তে তিনি ভালবাসেন। কিন্তু রাজনীতির ব্যস্ততায় অনেক সময়েই তা হয়ে উঠত না। কিন্তু এখন অফুরন্ত সময়। আর তাই বই-ই তাঁর সব সময়ের সঙ্গী। প্রণববাবু বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি ভবনের গ্রন্থাগারে এত ভাল ভাল বই রয়েছে যে তিন বার রাষ্ট্রপতি হলেও তা পড়ে শেষ করা যাবে না!’’
আগামি এক বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাসিনার রাজনৈতিক লড়াইয়ে। বিশিষ্ট জনেদের বক্তব্য, লড়াই শুধুমাত্র বিএনপি-র সঙ্গে নয়, নিজের দলকে শুদ্ধিকরণের প্রশ্নটাও উঠে আসছে। সর্বস্তরে ক্ষমতার প্রভাব দেখানো, দুর্নীতি, হেফাজতে ইসলামির চাপে পাঠ্যসূচি বদল— গত কয়েক বছরে সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই নিয়ে ক্রমাগত ক্ষোভ জমা হয়েছে। নিরপেক্ষ উদারনীতি থেকে আওয়ামি লিগ অনেকটাই সরে এসেছে— এই অভিযোগ ঢাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, আজ এই নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।