ঢাকা চাইলেও রোহিঙ্গা শিবিরে যাচ্ছেন না প্রণব

এটা ঠিকই যে গত চল্লিশ বছরে শাসক দল হোক বা বিরোধী শিবির— বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রচনায় প্রণববাবুর প্রভাব থেকেছে সব চেয়ে বেশি।

Advertisement

অগ্নি রায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কার্যত গোটা বিশ্ব সফর করেছেন। যদিও শেষ দিকে দিল্লির বাইরে পা বাড়াতে ছিল গভীর অনীহা।

Advertisement

কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরে এই প্রথম বিদেশ সফরে প্রণব মুখোপাধ্যায়। আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া তাঁর চার দিনের বাংলাদেশ সফর ঠাসা কর্মসূচিতে। ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য উৎসবের পৌরহিত্য থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের রাউজানে সূর্য সেনের ভিটে দর্শন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথাও রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবল উৎসাহ থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন না ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।

এটা ঠিকই যে গত চল্লিশ বছরে শাসক দল হোক বা বিরোধী শিবির— বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রচনায় প্রণববাবুর প্রভাব থেকেছে সব চেয়ে বেশি। বর্তমান সফরটিতে তাঁর প্রত্যক্ষ কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই ঠিকই। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশে আসছেন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে হাসিনার সঙ্গে ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা করতেই।

Advertisement

ভোটের মুখে দাঁড়ানো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটিও এখন যথেষ্ট স্পর্শকতার জায়গায় দাঁড়িয়ে। তিস্তা চুক্তি এখনও বিশ বাঁও জলে। আওয়ামি লিগ সূত্রের খবর, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নয়াদিল্লির অবস্থানে হতাশ হাসিনা। প্রণববাবু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরে গেলে কিছুটা হলেও সুযোগ ছিল সেই ক্ষত মেরামতির। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মোদী সরকার সেই ঝুঁকি নিতে নারাজ।

আরও পড়ুন: দাবিতে অনড় চার ‘বিদ্রোহী’

ঢাকার ওয়াকিবহাল শিবির বলছে, প্রণববাবু যদি চট্টগ্রামে না-যেতেন, তা হলে রোহিঙ্গা শিবির যাওয়ার প্রসঙ্গই উঠত না। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির আকাশপথে খুবই কাছে। প্রণববাবুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনি নিজেও আগে ভেবেছিলেন শিবিরে যাবেন। ভারত যে শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল সেই বার্তা যাবে। কিন্তু সাউথ ব্লকের বক্তব্য, প্রণববাবু গেলে আরও বেশি প্রশ্ন উঠত। জানতে চাওয়া হতো, ভারত রোহিঙ্গা নিয়ে কী অবস্থান নিচ্ছে। ভারতের মায়ানমার নীতি নিয়েও অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠে বিতর্ক বাড়ত।

আর তাই সচেতন ভাবেই এই না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চিন ত্রিস্তরীয় সমাধান সূত্র ঘোষণা করার পর নিঃসন্দেহে ভারতকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশে বেজিংয়ের প্রভাব বেড়েছে। ৬ লাখ শরণার্থী নিয়ে নাস্তানাবুদ হাসিনা সরকার আশা করেছিল ভারত বিষয়টি নিয়ে মায়ানমারের উপর চাপ দেবে। সক্রিয় দৌত্য করবে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে মায়ানমারে গিয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণটুকুও করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বরং সে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে মায়ানমারকে খুশি করার চেষ্টা করলেন। কারণ, ভারতের বরাবরের আশঙ্কা—মায়ানমারকে তুষ্ট না-রাখতে পারলে দেশটি পুরোপুরি চিনের প্রভাবে চলে যাবে।

পরে অবশ্য বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য ত্রাণ পাঠিয়ে কিছুটা ভারসাম্যের চেষ্টা হয়, কিন্তু তত ক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। চিন ঘোষণা করে দিয়েছে শরণার্থী সমস্যা মেটাতে তারা আর্থিক এবং কূটনৈতিক সব রকম ভাবে শেখ হাসিনার পাশে রয়েছে। প্রয়োজনে মায়ানমারের উপর চাপ তৈরি করেই।

ঢাকার এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘মায়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সেনা প্রশাসন— দু’তরফেই চিনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তারা এগিয়ে আসায় আমরা আশাবাদী যে রোহিঙ্গা সমস্যা মিটবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement