রাস্তায় এই ভাবেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
তীব্র যানজট। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি।
পেটের টানে রাজধানীতে থাকলেও পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বাড়ির পথে ছুটছে শহুরে মানুষগুলো। বাংলাদেশে দুই ঈদের এটাই ছবি। অর্ধেকের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন- শেকড়ের টানে। প্রতি বছরের এই স্বাভাবিক ছবির ব্যাতিক্রম নেই এ বারেও। ঢাকা শহর ছাড়ার প্রতিটি বাস টার্মিনালে মানুষের উপচে পড়া ভীড়। সময় মতো গাড়ী ছাড়া নিয়ে শঙ্কা, মহাসড়কে মাইলের পর মাইল যানজট- তবু বাড়ি ফিরতেই হবে, থাকুক না পথে বিপত্তি। কিন্তু এ বারে সেই বিপত্তি আর ভোগান্তির মাত্রা বেশ বেশি।
রেলপথে সময়মতো বাড়ি ফিরতে পারলেও ভোগান্তিতে পড়েছে সড়কপথের যাত্রীরা। মহাসড়কে যানজট-সহ বিভিন্ন কারণে বাস সময়ে না ছাড়ায় এবং গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পার থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত যানজটের কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। দেশের উত্তরাঞ্চলের ২২টি জেলার যানবাহন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করছে। যে জন্য বাড়তি চাপ পড়ছে সড়কটিতে। মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইন উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিপুল সংখ্যক যানবাহনের কারণে যানজট হচ্ছে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ, জেলা ও থানা পুলিশ, র্যাব, আনসার, জেলা প্রশাসন ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন কাজ করে যাচ্ছে।
এ দিকে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং মেঘনা সেতুতে গাড়ি বিকল হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৃহস্পতিবার রাত থেকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর থেকে মেঘনা-গোমতি সেতু পার হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে ঈদে ঘরমুখো মানুষ, পণ্যবাহী যানবাহন ও কোরবানির পশুর গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে।
আরও পড়ুন: ‘বলেছিল এই লোকটা ইসলাম বিরোধী, হত্যা করতে হবে’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের গাড়িগুলো মেঘনা-গোমতি ও মেঘনা সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় দুই লেনে পরিণত হয়। যাতে গাড়িগুলোকে ধীরগতিতে সেতু দু’টি পার হতে হয়। ধীরগতিতে পার হওয়ার সময় আরও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গনমাধ্যমকে বলেছেন, “ঈদে ঘরমুখী মানুষকে স্বস্তি দিতে সব রকমের চেষ্টা চলছে। যানজট নিরসনে পুলিশের সঙ্গে স্কাউট, কমিউনিটি পুলিশ কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও নিয়মিত এ সবের খোঁজখবর রাখছেন।” মন্ত্রী আরও বলেন, “এ বার ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক করতে পারব এমন আশ্বাস দিচ্ছি না। তবে যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলার অভাব একটা বড় সমস্যা। কারও ধৈর্য নেই। অনেকে উল্টো পথে গাড়ি চালান। এসব কারণে মহাসড়কে যানজট আরও বেড়ে যায়। পুলিশকে বলা হয়েছে, উল্টো পথে যাঁরাই যাবেন, তিনি মন্ত্রী হন বা ভিআইপি, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ দিকে ঈদের অগ্রিম টিকেটের গাড়ি তার সময় রক্ষা করতে পারছে না। যানজট ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার কারনে বাস টার্মিনালে যাত্রীদের চলছে অপেক্ষার পালা। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পারের জন্য অপেক্ষায় ছিল প্রায় চার হাজার ছোট গাড়ি ও আড়াই শতাধিক বাস। এই জটের কারনে গাড়ী চলাচলের সময়ের হিসেব অনেকটাই গোলমাল হয়ে বেড়ে গেছে যাত্রী ভোগান্তি।