চিত্র সাংবাদিক জীবন আহমেদ। ফাইল চিত্র
অফিস বলেছিল, ইউনিক ছবি চাই। ক্যামেরা নিয়ে ছুটেছিলেন জীবন আহমেদ। বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে পথে বেরনোর ফল জুটেছিল ভাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের বাইরের ফুটপাথে বৃষ্টিস্নাত চুম্বনরত এক যুগলকে দেখে ক্যামেরা ক্লিক করলেন জীবন। চুম্বনের দৃশ্যটি হাতছাড়া করতে চাননি ঢাকার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ওই চিত্রসাংবাদিক। কিন্তু সেই ছবিটিই তাঁর কাল হল। অনলাইনে নয়, নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে ছবি পোস্ট করার পর থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। চাকরিও হারাতে হল তাঁকে।
জীবনের বক্তব্য, যাঁরা তাঁকে পিটিয়েছিল, তাঁরাও একই পেশার মানুষ। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা না করায় তাঁর অফিস বিরক্ত হয়েছে। সে কারণেই তাঁর কাছে পরিচয়পত্র এবং ল্যাপটপ ফেরত চাওয়া হয়েছে। কিন্তু জীবনের মতে, এ সব চেয়ে নিয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁকে কাজ থেকে বিদায় করে দিচ্ছেন। জীবন বলেন, ‘‘অফিস থেকে আমাকে অ্যাডমিন অফিসার ফোন করে বললেন, আমার আইডি কার্ডটি অফিসে গিয়ে জমা করতে। আমি বলেছি, আমার কাছে অফিসের ল্যাপটপও আছে। সেখানে আমার কিছু ব্যক্তিগত ফাইল আছে। তা অন্যত্র সরিয়ে আমি সবই জমা দিয়ে আসব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অ্যাডমিন থেকে যে হেতু আইডি কার্ড জমা চেয়েছে, তাই আমি স্বাভাবিক ভাবে ধরেই নিয়েছি যে, আমার চাকরি নেই। চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্যই হয়তো আইডি কার্ড চাওয়া হয়েছে। অন্য কোনও কারণে কোনও কর্মীর আইডি কার্ড নেওয়া হয় না।’’
আরও পড়ুন: এই প্রথম নির্বাচনে জিতে পাকিস্তান পার্লামেন্টে যাচ্ছেন কোনও হিন্দু
জীবন আহমেদ যে অনলাইন পোর্টালে কাজ করতেন, আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৪ জুলাই তারাই ‘নির্মল প্রেমের চুমুর ছবি তোলায় পূর্বপশ্চিমের ফটোগ্রাফার জীবনের ওপর হামলা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ২৮ জুলাই তাদের সংবাদের শিরোনাম ‘বৃষ্টিতে টিএসসির চুমুর ছবি তোলা জীবনের ভূমিকাই রহস্যময়’। সেই সংবাদে লেখা হয়েছে, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির নির্মল প্রেমের ছবিটির ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদকে নিয়ে কিছু অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিমূলক গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এ নিয়ে একাধিক নিউজপোর্টালে বেশ কিছু ভিত্তিহীন সংবাদও প্রচার হচ্ছে। বৃষ্টিতে টিএসসির চুমুর ছবি তোলার পর জীবনের রহস্যময় আচরণই এসব বিভ্রান্তি উসকে দিচ্ছে।’
এই ছবি তুলেই বিতর্কে জড়ান জীবন
পূর্বপশ্চিম অনলাইন পোর্টালে কন্ট্রিবিউটিং ফোটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেন জীবন। টিএসসিতে আলোচিত ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর দিন সকালে তার উপরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর জীবন অফিসে এসে তাঁর উপর হামলার বিষয়টি জানান। ফোটোগ্রাফারের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় বলে ওই পোর্টালের তরফে জানানো হয়। আইনি পদক্ষেপ করতে অফিসের একাধিক কর্মী-সহ তাঁকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়। পাশাপাশি তাঁর ওপর হামলাকারী বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত চিত্রসাংবাদিকদের অফিসে যোগাযোগ করে তাঁদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানো হয়। পরে অজানা কারণে জীবন থানায় কোনও অভিযোগ না জানিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে সমঝোতা করেন। সমঝোতার আগে বা পরে অফিসকে তিনি কিছুই জানাননি বলে ওই পোর্টালের অভিযোগ।
আরও পড়ুন: যোগীর সামনে নতজানু হয়ে আশীর্বাদ নিলেন পুলিশকর্মী!
এরই মধ্যে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে ওই পোর্টাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, ওই ছবিটির কারণে জীবনের উপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। ব্যক্তিগত বিরোধের কারণেই এই হামলা ঘটছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে অফিসে গত ২৫ জুলাই বৈঠক ডাকা হয় এবং পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে জীবনকে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বৈঠকে জীবন আসেননি এবং অফিসের সঙ্গে পরবর্তীতে তিনি কোনও যোগাযোগ করেননি।